রাজ্যে পর পর অ্যাসিড হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার বছর খানেক আগে অ্যাসিড কেনাবেচার উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে নির্দেশিকা জারি করেছিলেন।
কী ছিল সেই নির্দেশিকায়!
এক, সংশ্লিষ্ট থানা এলাকাগুলিতে কোন কোন দোকানে অ্যাসিড বিক্রি করা হয় তার তালিকা তৈরি। দুই, তাদের অ্যাসিড বিক্রির বৈধ কাগজপত্র আছে কি না। তিন, দোকানে কেউ অ্যাসিড কিনতে এলে তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং কী জন্য কিনছেন তা জেনে রাখা। চার, একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর দোকানে অ্যাসিডের স্টক পরীক্ষা করা। কত বিক্রি হয়েছে ও কত পড়ে রয়েছে তার হিসাব রাখা। রাজ্যের সব মহকুমাতেই পুলিশকে এই নির্দেশিকা মেনে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। যদিও তার পরেও বিভিন্ন জেলায় একাধিক অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই এই নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কি না তা নিয়ে।
হাওড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে চলছে অ্যাসিড কেনাবেচা। শৌচালয় পরিষ্কারের অ্যাসিড তো বটেই, সোনার দোকানে ব্যবহৃত বিপজ্জনক নাইট্রিক অ্যাসিডও পাওয়া যাচ্ছে খোলা বাজারে। সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলার বিন্দুমাত্র নমুনাও কোথাও দেখা যায়নি। উলুবেড়িয়া, বাগনান, ডোমজুড়-সহ জেলার প্রায় সর্বত্রই চোখে পড়েছে এক ছবি।
জেলা পুলিশের (গ্রামীণ) এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘পুলিশি নজরদারি রয়েছে।’’ অথচ নজরদারির কাজ যে ঠিকভাবে হচ্ছে না তা পুলিশের একাংশ স্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী না থাকায় সব সময় সব দোকানে নজর রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
উলুবেড়িয়ার একটি দোকানে নাইট্রিক অ্যাসিডের খোঁজ করতেই দোকানদার প্রথমে আছে বলে জানান। জানা গেল, ৫০০ গ্রামের বোতল পিছু দাম পড়ে ৪০-৫০ টাকা। পরে পরিচয় বুঝতে পেরে জানালেন নাইট্রিক অ্যাসিড নয়, শুধু শৌচালয় পরিষ্কার করার অ্যাসিডই রাখেন। দোকানে কখনও পুলিশ এসে খোঁজখবর করেছে কি না জানতে চাইলে, তাঁর উত্তর, পুলিশের কোনও অভিযানই হয় না দোকানে।
অথচ গত কয়েক মাসে একের পর এক অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে জেলায়। ১৭ নভেম্বর বাউড়িয়ায় ফোর্টগ্লস্টার কোম্পানির সিপাই কোর্য়াটারে প্রাক্তন সেনাকর্মীর স্ত্রীর উপর এক প্রতিবেশী অ্যাসিড ছোড়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার প্রতিবাদ করায়। তার আগে ১০ জুলাই বাউড়িয়ারই সন্তোষপুর এলাকায় এক সোনার দোকানের কর্মীর উপরে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি ক্ষেত্রেই পুলিশের বক্তব্য ছিল শৌচালয়ে ব্যবহার করা অ্যাসিড ছোড়া হয়েছিল। দাবিমতো পণ না মেলায় গত ১১ নভেম্বর উলুবেড়িয়ায় এক গৃহবধূর মুখে অ্যাসিড ঢেলে মেরে ফেলার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। বাধা দিতে গিয়ে অ্যাসিডে গুরুতর জখম হন তিনি। পর পর এমন ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন মানুষ। অনেকেরই বক্তব্য, সরকারি নির্দেশিকা মেনে পুলিশি নজরদারি যথাযথ থাকলে অ্যাসিড হামলা কিছু অনন্ত কমবে। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, শুধু নির্দেশিকা নয়, অ্যাসিড হামলায় অপরাধীদের কড়া শাস্তি। যাতে কেউ এ সব করার সাহস না পায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy