Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আজ পরীক্ষা স্কুলে, নেই কোনও শিক্ষক

স্কুলে পড়াশোনার বালাই নেই। কারণ, স্কুলে একজনও শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। পড়ুয়ারা অবশ্য মিড ডে মিল খেতে স্কুলে আসছে। প্রায় এক মাস ধরে এ ভাবেই চলছে উলুবেড়িয়ার কাজিরচক জুনিয়র হাইস্কুল। এর মধ্যেই আজ সোমবার থেকে ওই স্কুলে ইউনিট টেস্ট শুরু হওয়ার কথা।

...লাঙল তুলে ধর। কাজিরচক জুনিয়র হাইস্কুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

...লাঙল তুলে ধর। কাজিরচক জুনিয়র হাইস্কুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

স্কুলে পড়াশোনার বালাই নেই। কারণ, স্কুলে একজনও শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। পড়ুয়ারা অবশ্য মিড ডে মিল খেতে স্কুলে আসছে। প্রায় এক মাস ধরে এ ভাবেই চলছে উলুবেড়িয়ার কাজিরচক জুনিয়র হাইস্কুল। এর মধ্যেই আজ সোমবার থেকে ওই স্কুলে ইউনিট টেস্ট শুরু হওয়ার কথা।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৮৬ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। শনিবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ওই স্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলবাড়িতে জুনিয়র স্কুলটি চলছে। তবে স্কুলের নিজস্ব বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। স্কুলের মধ্যে চুড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। কয়েক জন ছাত্র ভাঙা বেঞ্চ নিয়ে মারামারি করছে। স্কুলের এক কোণে চলছে মিড ডে মিলের রান্না। প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারাধন চক্রবর্তী এসে মাঝে মাঝে হাঁকডাক করলেও তেমন লাভ হচ্ছে না। হারাধনবাবুর ক্ষোভ, ‘‘শিক্ষক না থাকায় হাইস্কুলের পঠন-পাঠন তো উঠে গিয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলের পড়াশোনাও উঠতে বসেছে!’’

জেলা শিক্ষা দফতর এবং স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সর্বশিক্ষা অভিযানের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে গ্রামবাসীদের দান করা জমিতে স্কুলটি তৈরি হয়েছিল। প্রথম বছরে ৭ জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। বছর কয়েক আগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এই স্কুলে একজন শিক্ষিকা আসেন। এর ভিতরে অতিথি শিক্ষকদের বয়স ৬৫ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অবসর নিয়ে নেন। তার পর থেকে এক জন শিক্ষিকাই পঠনপাঠন চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গত ১ অগস্ট থেকে তিনি বিএড করার জন্য ছুটি নিয়ে নেন। তখন থেকেই স্কুলটি শিক্ষিক-শিক্ষিকাহীন।

শনিবার অবশ্য কল্পনা কাঁড়ার নামে ওই শিক্ষিকা কয়েক ঘণ্টার জন্য স্কুলে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর আমার ছুটি মঞ্জুর করেছেন। তবে মানবিকতার খাতিরে সপ্তাহে একবার করে স্কুলে আসি।’’ স্কুলের মিড ডে মিলের হিসেব তিনিই রাখেন। তাঁর দাবি, স্কুলের বর্তমান অবস্থার কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাঁরা নতুন করে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের কথা বললেও এখনও কিছু হয়নি। এই আলোচনার মধ্যেই স্কুলে এসে উপস্থিত হন দেবীপ্রসাদ মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধ। তাঁর দাবি, তাঁকে অতিথি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও কোনও নিয়োগপত্র তিনি পাননি।

তা হলে আজ, সোমবার থেকে ইউনিট টেস্ট কীভাবে হবে? দেবীপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘আমার ২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা। তার আগে কী ভাবে পরীক্ষা হবে বলতে পারব না।’’ যদিও কল্পনাদেবীর আশ্বাস, ‘‘পরীক্ষা হবেই। সরকারি ভাবে আমি পঠন-পাঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে না পারলেও যেভাবেই হোক পরীক্ষার দিনগুলিতে আসব।’’

হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাস বলেন, কোনও স্থায়ী শিক্ষক বিএড পড়তে গেলে তাঁর জায়গায় ডেপুটেশনের ভিত্তিতে একজন শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার কথা। এ ছাড়া অতিথি শিক্ষক নিয়োগে কোনও বাধা নেই। কিন্তু ওই স্কুলে এ রকম অবস্থা কেন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher classroom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE