Advertisement
১৮ মে ২০২৪

সিঁদুরে মেঘেই বন্ধ নর্থব্রুক

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ অবশ্য বলছেন, আসলে সিঁদুরে মেঘ দেখেছেন কর্তৃপক্ষ। এ বার ঝগড়া, মারামারি কিছু হয়নি বটে। তবে ২০১৪ সালে শ্রমিক বিক্ষোভ ঠেকাতে গিয়েই মার খেয়েছিলেন এইচ কে মাহেশ্বরী নামে এক মিল কর্তা।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০২
Share: Save:

বন্ধ দরজার সামনে ইতিউতি ভিড় করে রয়েছেন শ্রমিকেরা। চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। পাশেই দাঁড়িয়ে র‌্যাফ, পুলিশের একাধিক গাড়ি। এর মধ্যেই প্রশ্নটা করে বসলেন নর্থব্রুক জুটমিলের পাটঘরের কর্মী রাজেন্দর যাদব, ‘‘মিল বন্ধ করার মতো কী ঘটনা ঘটেছিল? কোনও মারপিট, বিক্ষোভ হয়নি। শ্রমিকদের কথা না ভেবে একতরফা মিল বন্ধ করে দিলেন কর্তৃপক্ষ!’’ মঙ্গলবার দুপুরে চিত্র।

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ অবশ্য বলছেন, আসলে সিঁদুরে মেঘ দেখেছেন কর্তৃপক্ষ। এ বার ঝগড়া, মারামারি কিছু হয়নি বটে। তবে ২০১৪ সালে শ্রমিক বিক্ষোভ ঠেকাতে গিয়েই মার খেয়েছিলেন এইচ কে মাহেশ্বরী নামে এক মিল কর্তা। গুরুতর জখম মাহেশ্বরীর মৃত্যু হয়েছিল পরে। সে বারও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল মিল। ২০১৬ সালেও শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে একবার মিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার মিলে তালা পড়ায় খাঁ খাঁ করছে গোটা এলাকা।

নর্থব্রুক জুটমিলের দরজার কাছেই জিটি রোডের উপর ভাতের হোটেল বিকাশ শায়ের। এক সময় তাঁর কাকা চালাতেন এই হোটেল। এখন চালাচ্ছেন বিকাশ। সারাদিন তাঁর হোটেলে শ্রমিকদের ভিড় লেগে থাকে। মঙ্গলবার থেকে খদ্দের কমতে শুরু করেছে। তিনি বলছিলেন, ‘‘আজ তাও কিছু মানুষ এসেছেন। মিল বন্ধ। এখন চিন্তা হয়ে গেল। এরপর দেখবেন আরও ফাঁকা আমার হোটেল।’’

শুধু বিকাশ নন, নর্থব্রুক জুটমিলের গেটে সার সার আরও কয়েকটি দোকান রয়েছে। ভিজে ছোলা, ফল, জলখাবার বিক্রি করেন তাঁরা। মাথায় হাত তাঁদেরও। শুধু দোকানদারেরা নন, ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক জুটমিল লাগোয়া এই মহল্লার পুরো এলাকাটার অর্থনৈতিক কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে মিলকে কেন্দ্র করে।

এই মিল প্রায় চার হাজার শ্রমিকের রুটিরুজির ঠিকানা। এ দিন জুটমিলের ন’টি শ্রমিক সংগঠন পথে নামে— কারখানা খোলার দাবিতে। দিনভর বিক্ষোভ হয় কারখানার গেটে। সকালে এক সময় কারখানা লাগোয়া জিটি রোডে অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। তবে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে সেই পথ অবরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

কী হয়েছিল মিলে? কেনই বা তার জেরে মিল বন্ধ?

শ্রমিকদের দাবি, দুই মিল কর্মী দীপক পাণ্ডে এবং লালবাহাদুর দাস কিছুটা বেশি সময় কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছিলেন শ্রমিকদের টিফিনের জন্য। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ২০ মিনিটের বেশি দিতে রাজি নন। এর প্রতিবাদ করেন ওই দুই শ্রমিক। তাঁরা মিল চত্বরে বিক্ষোভও দেখান। এরপরই মিল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। তারই প্রতিবাদে শ্রমিকেরা মিলে বিক্ষোভ দেখান। সোমবার থেকে কর্তৃপক্ষ ‘অস্থায়ী সাসপেনশন অব ওয়ার্কের’ নোটিস ঝোলান গেটে।

শ্রমিক নেতা শঙ্কর পাণ্ডে এবং মহম্মদ আসলাম অবশ্য এ বার মিল বন্ধের নেপথ্যে অন্য অঙ্ক দেখছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘মিলে একমাস পাটের জোগান দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। পাট সরবরাহ কম করায় মিলের স্থায়ী শ্রমিকেরা কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের প্রচুর গ্র্যাচুইটির টাকা বাকি। এ সব কারণেই শ্রমিকদের উপর দোষ চাপিয়ে কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ করে দিলেন।’’

মিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ্বর পান্ডে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই মিল চলুক। আর শৃঙ্খলাও বজায় থাক। শ্রমিকেরা চাইলে এ বারের সমস্যা এখনও আলোচনা করেই মেটানো যায়।’’ কিন্তু তাঁর অভিযোগ, নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে এই এলাকারই অন্য মিলে কাজ করছেন তাঁদের শ্রমিকেরা। কারণ পাটমিল শিল্পে সার্বিক মন্দা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Brook Jute Mill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE