Advertisement
২১ মে ২০২৪

আজও পুরনো ঐতিহ্যই রাংতাখালির মূল আকর্ষণ

গ্রামীণ যাত্রাশিল্পীদের হাতেখড়ি এবং যাত্রাপালার প্রতিযোগিতাই ছিল মূল আকর্ষণ। পুজোর চারদিন ধরে পৌরাণিক, ভক্তিমূলক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক পালায় মুখর হয়ে উঠত আরামবাগের রাংতাখালি গ্রামের জমিদার কুণ্ডু বাড়ির পুজো।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

গ্রামীণ যাত্রাশিল্পীদের হাতেখড়ি এবং যাত্রাপালার প্রতিযোগিতাই ছিল মূল আকর্ষণ। পুজোর চারদিন ধরে পৌরাণিক, ভক্তিমূলক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক পালায় মুখর হয়ে উঠত আরামবাগের রাংতাখালি গ্রামের জমিদার কুণ্ডু বাড়ির পুজো। দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রা শুনতে আসতেন মানুষজন। গ্রাম বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম এই ধারাটি ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। উধাও হয়ে যাচ্ছে আরও অনেক ঐতিহ্য। তবু এখনও যেটুকু সেই ঐতিহ্য টিকে আছে, তা-ই রাংতাখালির পুজোকে আরামবাগ মহকুমার অন্য পুজোর থেকে আলাদা করে রেখেছে।

দ্বারকেশ্বর নদের গায়ে রাংতাখালির কুণ্ডু বাড়ির পুজোর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর। কুণ্ডু পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার গোবিন্দ কুণ্ডু। দুর্গার কোনও প্রতিমা নেই। পাকা দু’তলা ঠাকুর দালানে অষ্টধাতুর জয়া-শীতলা-মনসা মূর্তিই দুর্গা রূপে পূজিত হন। প্রথমার দিন ঢাক বসে। চতুর্থীর দিন পাশেই দ্বারকেশ্বর নদের পলি দিয়ে অষ্টধাতুর মূর্তির গা মাজেন ব্রাহ্মণরা। ওই দিনই অষ্ট ধাতুর মূর্তিতে দুর্গার পোষাক এবং অলংকার দিয়ে সাজানো হয়। এখন সেই জমিদার পরিবার ভেঙে ২০০টির বেশি পরিবার হয়েছে। দু-চারটি পরিবার গ্রামে থাকেন। পুজোর চারটে দিন অবশ্য অনেকেই রাংতাখালি আসেন।

জমিদার বাড়ির এই পুজোর ‘নিশানা’ লাল পতাকা ওড়া। পুজোর ঠিক ৩০ দিন আগে বাঁধানো মন্দিরের দু’তলা ছাদের উপর প্রায় ৪০ ফুট উঁচু বাঁশের ডগায় ওই পতাকা ওড়ে। ওই নিশানাই প্রাচীনকাল থেকে আশেপাশের ১০টি গ্রামকে নিমন্ত্রণের বার্তা। নবমীর দিন সকলকে মাংস-ভাত খাওয়ানোর রীতি এখনও আছে। তবে বছর ৫০ আগে পর্যন্ত ২০টি পাঁঠার বদলে এখন দু’টি পাঁটা বলি হয়। ওই দিনই কাঙালি ভোজন এবং দুঃস্থদের দান প্রথা টিকিয়ে রেখেছেন বংশধররা। আর একটি ঐতিহ্য চতুর্থীর দিন থেকে জ্বলে ওঠা ঝাড়লন্ঠনগুলি সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে জানান পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।

অষ্টমীর দিনের রীতি অবিকল আছে। ওই দিন শুধুই পরিবারের মহিলাদের অনুষ্ঠান। পুষ্পাঞ্জলির সময় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালাবেন বধূরা। তরুণী থেকে বৃদ্ধা— পরিবারের প্রত্যেক মহিলাই পুষ্পাঞ্জলি দেবেন নিজ নিজ বিয়ের বেনারসী শাড়িটি জড়িয়ে। ওই দিন পুষ্পাঞ্জলির পর ধুনো পোড়ানো অনুষ্ঠান হয়। বধূদের মাথায় এবং দু’হাতে ধরা মাটির পাত্রে ধুনো জ্বলাকালীন তাঁদের কোলে নিজের পরিবারের ছাড়াও বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা শিশুদের বসানো হয়। জমিদার বংশের বর্তমান প্রজন্মের দেবাংশু কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুজোটির অনেক ঐতিহ্য হারিয়েছি। দেশের সমস্ত শিশুদের মঙ্গল কামনায় পূর্বপুরুষদের চালু করা এই রীতিটা অন্তত টিঁকিয়ে রাখতে চাই আমরা।’’ — ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Tradition Durgapuja 350 years
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE