Advertisement
০৪ মে ২০২৪
প্রশাসনের বিরুদ্ধে নালিশ খাদ মালিকদের

দূষণ-শংসাপত্র নিয়ে সমস্যার কারণেই বাড়ছে বালি চুরি

চার মাস পেরিয়ে গিয়ে‌ছে। হুগলি জেলার নদীগুলি থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রে দূষণ সংক্রান্ত শংসাপত্রের জট এখনও কাটেনি। ফলে বৈধ ভাবে বালি তোলা বন্ধ। ব্যবসা চালু রাখতে বালিখাদ মালিকদের লাগাতার ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর মাসখানেক আগে জেলাশাসককে মাথায় রেখে প্রশাসনিক একটি কমিটি তৈরি হয়।

দ্বারকেশ্বরে চলছে বালি তোলা। ছবি: মোহন দাস।

দ্বারকেশ্বরে চলছে বালি তোলা। ছবি: মোহন দাস।

পীযূষ নন্দী
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০২
Share: Save:

চার মাস পেরিয়ে গিয়ে‌ছে। হুগলি জেলার নদীগুলি থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রে দূষণ সংক্রান্ত শংসাপত্রের জট এখনও কাটেনি। ফলে বৈধ ভাবে বালি তোলা বন্ধ। ব্যবসা চালু রাখতে বালিখাদ মালিকদের লাগাতার ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর মাসখানেক আগে জেলাশাসককে মাথায় রেখে প্রশাসনিক একটি কমিটি তৈরি হয়। কিন্তু সমস্যা মেটাতে সেই কমিটিও নিষ্ক্রিয় বলে বালি খাদ মালিকদের অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতে গত চার মাস ধরে বালি তোলার বৈধ অনুমতি না মেলায় রুটি রুজি সামালতে বালি চুরির হিড়িক পড়েছে আরামবাগ মহকুমার নদীগুলিতে। এমনিতেই ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরকে সরিয়ে বালি উত্তোলনের বিষয়টি সেচ দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকেই রাজস্ব আদায় নিয়ে সেচ দফতরের পরিকাঠামোর অভাবে নদীগুলি অরক্ষিতই থেকে গিয়েছে। এখন বালি তোলার অনুমতি না মেলায় যেটুকু রাজস্ব আদায় হচ্ছিল তাও বন্ধ। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য জেলাশাসককে মাথায় রেখে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধভাবে বালি তোলা রুখতে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ এপ্রিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশিকা জারি করে নদী থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রে দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলে ঘুরেও সেই ছাড়পত্র কোথায় মিলবে তার হদিস পাচ্ছিলেন না বালিখাদের মালিকরা। দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র না মেলায় সেচ দফতরও চালান ইস্যু বন্ধ রেখেছে। ফলে গত চার মাস ধরে বালি তুলতে না পেরে রুটি-রুজির প্রশ্নে গভীর সঙ্কটের মুখে কয়েক হাজার শ্রমিক এবং বালিখাদ মালিকেরা। বালিখাদ মালিকদের একটা বড় অংশ সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি এটাও স্বীকার করেছেন, বালি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিকদের রুটিরুজির কারণে বাধ্য হয়েই বালি চুরি করতে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু পুরশুড়ায় মুন্ডেশ্বরী নদী থেকেই প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ লরি বালি পাচার হচ্ছে। দামোদর নদীর খুশিগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকেও লাইন দিয়ে লরি এবং ট্রাক্টরে বালি বওয়া চলছে। আরামবাগের দ্বারকেশ্বর নদীর ছবিও একই। গত বুধবার রাতেই পুরশুড়ার মারকুন্ডায় খুশিগঞ্জ-সোদপুর রোডে ৫০টি বালিবোঝাই লরি আটকে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, তাঁদের অভিযোগ রাতের অন্ধকারে বেপোরায়া ভাবে চলা ওই সব লরির কারণে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রসঙ্গত, হুগলি জেলার মূল বালির ক্ষেত্র বলতে আরামবাগ মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর, মুন্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বর নদী। বৈধভাবে চালান কেটে এই তিনটি নদীর প্রায় ২২০টি খাদ থেকে বালি তোলা হয়। এক একটি বালি খাদ পিছু অন্তত ৮০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। ওই সব খাদ থেকে বালি তোলা বাবদ প্রতি মাসে সেচ দফতরের ঘরে ন্যূনতম ৩ কোটি টাকা জমা পড়ে বলে বালি খাদ মালিকদের দাবি। কিন্তু বর্তমানে দূষণ সংক্রান্ত শংসাপত্রের জটে যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন বালিখাদ মালিকেরা, তেমনই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্যও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE