Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পোস্তার ঘটনায় শঙ্কিত শ্রীরামপুর দাবি তুলল উড়ালপুল সংস্কারের

বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে।কলকাতার পোস্তায় নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর রাজ্যে অন্যান্য উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নটা আরও জোরালো হতে শুরু করেছে। যার থেকে বাদ পড়েনি হুগলির শ্রীরামপুরে সিকি শতাব্দী পার হওয়া উড়ালপুলও।

উড়ালপুলের ভাঙা গার্ডওয়াল।

উড়ালপুলের ভাঙা গার্ডওয়াল।

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০০
Share: Save:

বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে।

কলকাতার পোস্তায় নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর রাজ্যে অন্যান্য উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নটা আরও জোরালো হতে শুরু করেছে। যার থেকে বাদ পড়েনি হুগলির শ্রীরামপুরে সিকি শতাব্দী পার হওয়া উড়ালপুলও। স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ী থেকে শাসক-বিরোধী সব দলের নেতারাই চান বৃহস্পতিবারের বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি আটকাতে হুগলির উড়ালপুলের ‘স্বাস্থ্য’ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হোক।

হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘ওই উড়ালপুল-সহ জেলায় আর যে সব উড়ালপুল আছে সেগুলি পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’

প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপুলের জায়গায় জায়গায় গার্ড ওয়ালে ফাটল। কোথাও খসে পড়েছে পলেস্তারা। কংক্রিট ফেটে রড বেরিয়ে গিয়েছে কিছু জায়গায়। মাঝেমধ্যে গজিয়ে উঠেছে বট, অশত্থ গাছ। বাম আমলে শ্রীরামপুরে জিটি রোডের উপর রেলের লেভেল ক্রসিংয়ের যানজট দূর করতে এই উড়ালপুল তৈরি হয়। ১৯৯১ সালের ১ এপ্রিল উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। উড়া‌লপুলের নীচে বহু দোকানঘর রয়েছে। আস্ত বাজার বসে। উড়ালপুলের একেবারে গা ঘেঁষে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সংখ্যাও কম নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, দিনভর অসংখ্য গাড়ি উড়ালপুল দিয়ে চলাচল করে। যার মধ্যে ভারী ট্রাক ও ট্রেলারও রয়েছে। তৈরি হওয়া ইস্তক উড়ালপুলে বড় ধরনের মেরামতি তেমন হয়নি। তবে পিচ উঠে গেলে নতুন করে প্রলেপ পড়েছে। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই দশকের ধকল সয়ে তা কতটা মজবুত, পোস্তার দুর্ঘটনার পর সেই প্রশ্নই এখন উঁকি দিচ্ছে লোকজনের মনে।

যত্রতত্র গজিয়েছে বট, অশত্থ গাছ।

সেদিন দোকানদারদের অনেকেই চোখ রেখেছিলেন টিভির পর্দায়। কমলকৃষ্ণ খাঁ নামে এক তেলেভাজা বিক্রেতা বলেন, ‘‘টিভিতে পোস্তার ঘটনা দেখতে দেখতে আমাদের উড়ালপুলে কথা ভাবছিলাম।’’ উড়ালপুলের নীচে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা সপার্ষদ বসেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর উত্তম রায়। গলায় কিছুটা রাজনীতি মিশিয়েই তিনি বলেন, ‘‘এই উড়ালপুল তৈরি হয় বাম জমানায়। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছিল। তার পরে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। সরকারে কে আছে সেটা বড় কথা নয়। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ভালভাবে পরীক্ষা করানো দরকার। কেননা, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে সমবেদনা জানানোর চেয়ে আগে সাবধান হওয়া ভাল।’’

উড়ালপুলের ধারেই সাইকেল সারানোর দোকা‌ন বৃদ্ধ আব্দুল মল্লিকের। তাঁর কথায়, ‘‘উড়ালপুলের গায়ে বট, অশত্থ গাছ গজিয়েছে। সাইডে রড বেরিয়ে গিয়েছে। কোনও দিন তো দেখলাম না কেউ এসে পরীক্ষা করছেন! এটাও ভেঙে পড়তে পারে ভেবে সরে তো আর যেতে পারব না। পেট চালাতে দিন রাত এখানেই থাকতে হবে।’’ উড়ালপুলের দু’পাশ দিয়ে বেসরকারি সংস্থার কেবল গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, যে পাত দিয়ে কেবল আটকানো থাকে, মাঝেমধ্যে সেই পাতের অংশ ভেঙে পড়ে। উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ লুকোলেন না কেউই। প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হোক, এমন দাবিও তুললেন তাঁরা।

উড়ালপুল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের দাবি, উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়মিত করা হয়। তবে ওই দাবি যে কতটা অসাড়, উড়ালপুলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চোখ বুলোলেই পরিষ্কার হবে। সংস্কার বলতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে গার্ড ওয়ালে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের নীল-সাদা রঙের পোঁচ পড়েছে।

শুধু রং নয়, এ বার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার চাইছেন শ্রীরামপুরের মানুষ।

ছবি: নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE