আয়েশা খাতুন
মেয়ের মাদ্রাসার সহপাঠীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আয়েশার মা। ভাগ্যিস ওই মেয়েগুলোর কথায় নিজের মেয়ের বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলেন!
ডানকুনি সিনিয়র মাদ্রাসার পড়ুয়া আয়েশা খাতুন আলিম পরীক্ষায় ৮০২ নম্বর পেয়ে এ বার রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করল। সার্বিক ভাবে ষষ্ঠ।
ডানকুনির আকডাঙার মেয়েটির বাবা আওলাদ আলি রিকশাচালক। মা ফুলফুরা বেগম গৃহবধূ। ভাই শেখ নইমুদ্দিন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পড়ার ফাঁকে আয়েশা ছাতা তৈরির কাজ করে। ১২টা ছাতার শিক লাগালে ১৩ টাকা পায়। অভাবের সংসারে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলেন আয়েশার বাবা-মা। কয়েক মাস আগে বিয়ে ঠিকও করা হয়। কিন্তু বাদ সাধে মাদ্রাসার ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত ‘মিনা মঞ্চ’। মঞ্চের সদস্যরা আয়েশার বাড়িতে যায়। নাবালিকার বিয়ে দিলে কি সমস্যা হতে পারে, রাজ্য সরকারের প্রকল্পে একটি মেয়ে কী সুবিধা পেতে পারে, তা নিয়ে বাবা-মাকে বোঝায়। তা শুনে বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন আওলাদরা।
ফুলফুরা এখন বলছেন, ‘‘ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম। বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারত কিনা সন্দেহ!’’ আয়েশার কথায়, ‘‘ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’’ মেয়ের ভাল ফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বাবা-মায়ের। ‘বড় ক্লাসে’ পড়ার খরচ কী ভাবে সামলাবেন, চিন্তা সেটাই। ফুলফুরা অবশ্য বলছেন, ‘‘মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক। কষ্ট করেও ওকে পড়াব। তাড়াহুড়ো করে বিয়ের চেষ্টা আর করব না।’’ রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির মুখপাত্র তথা সংগঠনের হুগলি জেলা সম্পাদক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘‘আয়েশাকে দেখে অন্য মেয়ে এবং বাবা-মায়েরা অনুপ্রাণিত হোক।’’
হাসিবুর রহমান সর্দার, শেখ মহম্মদ মফিজুল্লা এবং সফদার হোসেন মোল্লা
হুগলির বিভিন্ন মাদ্রাসার ৬ জন আলিমে প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে। ফুরফুরা ফতেহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার বক্কর দালাল প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার বাড়ি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। ওই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সীতারামপুরের মহম্মদ সানোয়ার হোসেন পাইকের স্থান দ্বিতীয়। শেখ নিজামুদ্দিন এবং মহম্মদ নাজমুল আবিদ খন্দকার যথাক্রমে পঞ্চম এবং সপ্তম স্থানে রয়েছে। নিজামুদ্দিন থাকে তারকেশ্বরে। নাজমুল ফুরফুরায়।
আরামবাগের হরিণখোলা পিরনগর নবাবিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শেখ মহম্মদ মফিজুল্লা চুতর্থ স্থানে রয়েছে। তার সহপাঠী হাসিবুর রহমান সর্দার রয়েছে নবম স্থানে। মফিজুল্লা স্থানীয় পূর্ব কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। হাসিবুরের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নেবুখালি। ওই মাদ্রাসারই ছাত্র, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির বাসিন্দা সফদার হোসেন মোল্লা ফাজিলে চতুর্থ। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, “শিক্ষকদের উদ্যোগ এবং শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক সাফল্যের কারণ।’’
বাবার সঙ্গে নিয়মিত চাষ করে মফিজুল্লা। বিঘা দু’য়েক জমি আর দাদার রুটির দোকানের আয়ে সংসার চলে। মফিজু্ল্লা ডাক্তার হতে চায়। মা আকলিমা বেগম বলেন, “ছেলের সাফল্যের কৃতিত্ব শিক্ষকদের।” হাসিবুরও দুঃস্থ পরিবারের সন্তান। বাবা সারজেদ সর্দার মসজিদের ইমাম। হাসিবুরও ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু পরিবারে যা অনটন, তাতে স্বপ্নপূরণ কী করে হবে, তা নিয়ে সে দুশ্চিন্তায়। সফদার আরবিতে উচ্চশিক্ষা করতে চায়।
তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy