সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এত দিনে শ্রীরামপুরে সিল্ক-হাব তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাজারো পরিকল্পনার জাল বুনেও আসল কাজ রয়ে গিয়েছিল সেই তিমিরেই। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার তারকেশ্বরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন সিল্ক প্রিন্টিংয়ে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
সে দিন শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে শহরে প্রস্তাবিত ওই শিল্পতালুকের প্রসঙ্গ তোলেন। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পটি গড়ার ব্যাপারে নির্দেশ দেন। বৈঠকের পরেই রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের কাছে প্রকল্পের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়।
হুগলির এই তল্লাটে সিল্কের উপরে ছাপার কাজের ইতিহাস বহু পুরনো। শ্রীরামপুর এবং বৈদ্যবাটি পুর এলাকায় সিল্ক প্রিন্টিংয়ের অনেক কারখানা আছে। কয়েক হাজার মানুষ এই কাজে যুক্ত। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই শিল্পের কাঙ্ক্ষিত প্রসার ঘটেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। বছর কয়েক আগে শ্রীরামপুরের মাহেশ মৌজায় ৫০ একরেরও বেশি জমিতে সিল্ক-হাব তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। সব কারখানাকে ওই শিল্পতালুকে আনার পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে শিলান্যাসের পরে এক বছরের মধ্যে কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। কিন্তু ওই সময়সীমা পেরিয়ে আরও দেড় বছর অতিক্রান্ত। একটি ইটও পড়েনি। শিলান্যাসও হয়নি। ফলে, ছাপা কারখানার মালিকদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথমে ঠিক ছিল ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দফতর ওই প্রকল্প গড়বে। পরে ঠিক হয়, ওই জায়গায় ‘সিল্ক অ্যান্ড হ্যান্ডলুম পার্ক’ গড়বে শিল্পোন্নয়ন নিগম। পরিকল্পনা করা হয়, উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হবে। শিল্পকাজের প্রদর্শনীর জন্য অডিটোরিয়াম তৈরি হবে। হবে গেস্ট হাউস। তন্তুজ, মঞ্জুষা, খাদির মতো সংস্থা এখানে কাজ করাতে পারবে। বিশেষ পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। তাতে হাবে দূষণের মাত্রা কমবে। বর্তমানে সিল্ক প্রিন্টিং কারখানার দূষণ নিয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু পরিকল্পনা যা হয়েছে, সবই কাগজ-কলমে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জমি হস্তান্তর পর্যন্ত হয়নি। প্রশাসনের দাবি, জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। জমি রয়েছে ভূমি দফতরের হাতে। সিল্ক বোর্ড প্রকল্প রচনা করেছে। ইতিমধ্যেই তা নিগমের হাতে এসেছে। নিগমকে জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এগ্জিকিউটিভ তথা শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নানা কারণে দেরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলে দেওয়ার পরে নিশ্চয়ই প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত হবে।’’ অ্যাসোসিয়েশনের অপর দুই কর্তা তথা সিল্ক প্রিন্টিং ব্যবসায়ী মহানন্দ ঘোষ এবং প্রদীপ বণিকেরও একই বক্তব্য। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘প্রকল্প আদৌ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছিল। এখন মনে হচ্ছে, কাজ হবে।’’ মহানন্দবাবুর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে মেঘ কেটে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy