বিষাক্ত: এমন ধোঁয়া বেরিয়েই চলেছে আবর্জনার পাহাড় থেকে। নিষ্কৃতি কী ভাবে জানে না কেউ। হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
একে অসহ্য গরম। তার উপরে প্রায় দু’মাস ধরে জ্বলছে আগুন। ধোঁয়া আর তীব্র কটু গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা। অনেক চেষ্টা করেও সেই আগুন নেভাতে পারছে না দমকল। তাদের যুক্তি, দশ-বারোতলা সমান উঁচু আবর্জনার স্তূপ পেরিয়ে আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরের দিনই অন্য জায়গায় ফের আগুন আর ধোঁয়া বেরোতে শুরু করছে। ফলে নাজেহাল দমকলকর্মীরা।
হাওড়া পুরসভার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের এখন এমনই অবস্থা। আট নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ওই ভাগাড়ে হাওড়া শহরের সমস্ত আবর্জনা জমে জমে প্রায় পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে। পুরসভার দাবি, গ্রীষ্মকালে ওই আবর্জনা থেকে বেরোনো মিথেন গ্যাসে প্রায়ই আগুন লেগে যায়। পুড়তে থাকে প্লাস্টিক-সহ আবর্জনায় থাকা নানা দাহ্য বস্তু। সেই আগুন জ্বলতে থাকে যতক্ষণ না জল দিয়ে তা নেভানো হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, আগুন লাগলে আবর্জনার পাহাড় ছোট হয়ে যায় বলে অনেক সময়ে ইচ্ছে করেই সাফাইকর্মীরা তাতে আগুন লাগিয়ে দেন।
তবে হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সত্যজিৎ মিত্রের দাবি, ‘‘এই আগুন কেউ লাগিয়ে দেয় না। আবর্জনায় থাকা মিথেন গ্যাস বাতাসের সংস্পর্শে এলে আগুন ধরে যায়। এই ঘটনা গ্রীষ্মকালে প্রায়ই ঘটে।’’
ওই আগুনের জেরে আবর্জনায় মিশে থাকা প্লাস্টিক-সহ বিভিন্ন বস্তু পুড়ে বাতাসে মেশায় পরিবেশ যে দূষিত হচ্ছে, তা মানছেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর তথা হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে। আবর্জনায় আগুন লাগায় যে পরিবেশ দূষণ হয়, তা মানতেই হবে। তবে আমরা দ্রুত অন্যত্র বিকল্প ভাগাড়ের ব্যবস্থা করছি।’’ ভাস্করবাবু জানান, আগুন লাগলে তা দ্রুত নেভানোর জন্য দমকল দফতরকে সব সময়েই প্রস্তুত রাখা হয়। দমকলও দিনভর কাজ করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
তবে এই আগুন যে সব সময়ে নেভানো সম্ভব হয় না, তা মানছেন হাওড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত দমকলের ডিভিশনাল অফিসার প্রশান্ত ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘ভাগাড়ের উচ্চতার জন্য আমরা সব সময়ে আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছতে পারি না। তাই আগুন নেভানো যায় না। আমরা পাইপ দিয়ে রিলে ব্যবস্থায় যতটা পারি কাছাকাছি পৌঁছে আগুন নেভাই।’’
হাওড়ায় যে অবিলম্বে বিকল্প ভাগাড়ের প্রয়োজন, তা মানছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘প্রায়ই গ্যাস থেকে আগুন লেগে এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। তাই বিকল্প ভাগাড় তৈরির জন্য ডোমজুড়ে একটা ৯০ বিঘা জমি দেখেছি। সেই কাজ যাতে দ্রুত করা যায়, চেষ্টা করছি।’’
মেয়র জানান, ওই জমিতে আবর্জনা থেকে বায়ো গ্যাস তৈরির প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে চলেছে। তবে যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন শহরের জঞ্জাল ওই জমিতে ফেলা হবে। এর পরে ধীরে ধীরে বেলগাছিয়া ভাগাড়ের আবর্জনা সরিয়ে বায়ো গ্যাস তৈরির জন্য ওই জমিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy