Advertisement
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
সাপের ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত সারদা পল্লিতে

জলে ডোবা কচুবন পেরোতে ভরসা গামবুট

রহস্য ভাঙল সামনের রাস্তা। যেন পুকুর! গোড়ালি ডোবা কালো জল। পাশে কচুবন। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি আছে নামেই। আলো জলে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার।

ভোগান্তি: নিত্যদিন এই পথেই যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

ভোগান্তি: নিত্যদিন এই পথেই যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডানকুনি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:০৪
Share: Save:

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন তপন দাস। হঠাৎ পড়শি বাড়িতে ঢুকে গামবুট পড়ে নিলেন। পায়ের জুতোজোড়া বগলদাবা করে হাঁটা লাগালেন।

গামবুট কেন?

রহস্য ভাঙল সামনের রাস্তা। যেন পুকুর! গোড়ালি ডোবা কালো জল। পাশে কচুবন। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি আছে নামেই। আলো জলে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভরসা টর্চ বা মোবাইলের আলো। সাপের ছোবল থেকে বাঁচতেই তপনের ভরসা গাম্বুট। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর সাপের ছোবল খেয়েছিলাম। তার পরেই গামবুট কিনেছি। এ ভাবেই যাতায়াতে অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছি।’’ ছপ ছপ আওয়াজ করে যাওয়ার পথে যুবক, প্রৌঢ়া, মহিলা প্রত্যেকেই বলছিলেন, ‘‘চারপাশে সাপখোপের আস্তানা। কী করে বেঁচে আছি আমরাই জানি!’’

কোনও গণ্ডগ্রাম নয়। এই অবস্থা কলকাতা ঘেঁষা হুগলির ডানকুনির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সারদা পল্লির। বাসিন্দারা জানালেন, আগে জল দাঁড়ালে নেমেও যেত। কয়েক বছর আগে রেলের কারখানা হওয়ার সময় থেকে নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বর্ষায় সারদা পল্লি জুড়ে জল জমে। এলাকার একাংশ থেকে সেই জল শীতের আগে নামে না। তপনবাবুদের ক্ষোভ, ‘‘আমরা কর দিই। ভোট দিই। কাউন্সিলর থেকে পুরপ্রধান, বিধায়ক সবাই সমস্যার সুরাহার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কিছু করেননি।’’

গৃহবধূ পূরবী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বামীকে সাপে ছোব‌ল দিয়েছে। ছেলে ব্যান্ডের দলে গিটার বাজায়। রাত-বিরেতে প্রাণ হাতে ফেরে। পচা জলে চর্মরোগ হচ্ছে। একেবারে নরক যন্ত্রণা।’’ সম্প্রতি জবা দাস নামে ওই এলাকার এক মহিলাকে সাপে ছোবল দেয়। অনেকেই জানান, সারাক্ষণ সাপের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায়। প্রায়ই বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়ে। গৃহবধূ পূরবী কুণ্ডু বলেন, ‘‘বাচ্চারা ঘরে বন্দি থাকে। খেলতে বেরনোর উপায় নেই। পুজোয় সবাই আনন্দ করে। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে ঘরেই থাকি। জল ঠেলে ঠাকুর দেখতে বেরনো যায়!’’ সম্প্রতি এক গর্ভবতীকে পাঁজাকোলা করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এক প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘ডেঙ্গি সচেতনতার কথা হাস্যকর শোনায়। এই এলাকা মশার আঁতুড়ঘর। জ্বর লেগেই আছে।’’

সমস্যার কথা পুর কর্তৃপক্ষ মানছেন। তাঁদের বক্তব্য, অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি এবং নিকাশি হওয়ায় এই পরিস্থিতি। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর হাসরত আলি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের মিস্ত্রির পক্ষে ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় জলে মই পেতে কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে জল প্রায় নেমে গিয়েছে। শীঘ্রই আলো জ্বলবে। আমার বাড়িতেও জল ঢোকে। নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পুরসভায় আলোচনা চলছে।’’

পুরপ্রধান হাসিনা শবনম বলেন, ‘‘ওখানে মাঠ ছিল। এখন অনেক বাড়ি হয়ে যাওয়ায় জল নামছে না। পাম্প লাগিয়ে খালে বা বড় পুকুরে জল ফেলার উপায়ও নেই। কারখানা তৈরির সময় যে নর্দমা হয়েছিল, তাতে লাভ হয়নি। তার পরিবর্তে আমরা খোলা নর্দমা করব। দু’-এক দিনের মধ্যে পুরসভার তরফে পর্যবেক্ষণ করা হবে।’’ বিধায়ক স্বাতী খন্দকারের বক্তব্য, ‘‘সমস্যা সমাধানে পুরসভা থেকে সেচমন্ত্রী সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। সমস্যা মেটাতে বড় নর্দমা তৈরি করা হবে। শীঘ্রই কাজ

শুরু হবে।’’ এলাকাবাসীও তাই চান দ্রুত সমস্যার সমাধান।

অন্য বিষয়গুলি:

Fear Snake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy