গৌরীদেবীর (ইনসেটে) বাড়ি।
সোয়াইন ফ্লু-তে বৃদ্ধার মৃত্যুর পর আতঙ্ক গ্রাস করেছে গোটা আনুড় গ্রাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হয় গৌরী মুখোপাধ্যায়ের (৬৪)। তারপর পরিবারের লোকজন মৃতদেহ গ্রামে ফিরিয়েও নিয়ে যাননি। দাহ হয়েছে কলকাতার শ্মশানেই।
শনিবার গোঘাটের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের অধীন বর্ধিষ্ণু ওই গ্রামে বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে দেখা গেল তাঁর পুত্রবধূ ঝুমা মুখোপাধ্যায় গোটা বাড়ি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করছেন। স্থানীয় শ্রীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ঝুমা বলেন, ‘‘কী করে এ সব হল তাই তো বুঝতে পারছি না! শুনেছি সোয়াইন ফ্লু মারাত্মক ছোঁয়াচে। বাড়িতে আমার ১০ বছরের ছেলে রয়েছে। জীবাণু প্রতিরোধ করব কী ভাবে, জানি না।’’ তাঁর অভিযোগ, শাশুড়ির মৃত্যুর খবর জেনেও পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্য দফতরের কোনও দল তাঁদের বাড়িতে আসেনি।
ঝকঝকে বর্ধিষ্ণু আনুড়ে পশু খামার বা আবর্জনার স্তূপ বড় একটা চোখে প়ড়ে না। বিশেষত মুখোপাধ্যায় বাড়ি একেবারে ঝাঁ চকচকে। লাগোয়া একটি পুকুর, সামনে মাঠ, পাশে একটি বাড়ি আর তারপরেই ধান খেত। কামারপুকুর তীর্থক্ষেত্রের ৬ কিলোমিটারের মধ্যে ওই গ্রামে প্রায় ৮০০ পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামের দু’আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে শুয়োরের চাষ নেই। ফলে কোথা থেকে এল এই রোগের জীবাণু এখন তা নিয়েই ধন্দে এলাকার মানুষ।
গৌরীদেবীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত ডব্লিউবিসিএস অফিসার অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “শনিবার থেকে সামান্য জ্বর ছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসকের কাছে যাইনি। বাড়িতেই ওষুধ খাচ্ছিলেন স্ত্রী। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। সোয়াইন-ফ্লু জীবাণু কী ভাবে এল মাথায় ঢুকছে না।” মৃতার ছেলে অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে মায়ের পেসমেকার বসানোর হয়। তারপর থেকে মা বাড়িতেই থাকতেন। বিকেলে শুধু আমার ছেলে মাঠে খেললে একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়াতেন।’’
শনিবার সকালে এলাকায় কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ছবি: মোহন দাস
প্রতিবেশীরাও আতঙ্কিত। ছোটদের মাঠে খেলতে যেতে দিতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। ঝুমাদেবীর সুরে সুর মিলিয়ে তাঁরাও অভিযোগ করেছেন, মৃত্যু দু’দিন পরেও প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধি দল এলাকা পরিদর্শন করেনি। রোগ প্রতিরোধে কী করতে হবে তাও তাঁরা জানেন না। কী ভাবে রোগের জীবাণু ছড়ায় জানা নেই বেশির ভাগ মানুষের। গায়ে পোকা বা মাছি বসলেই আঁতকে উঠছেন তাঁরা। ফিনাইল ঢেলে যে যাঁর ঘর পরিষ্কার করছেন। বাড়ি লাগোয়া ঝোপ ধ্বংস করতে রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। অনেকে আবার মনে করছেন, গৌরীদেবীর বাড়ির পাশের পুকুর থেকে জীবাণু ছড়িয়ে থাকতে পারে। কেউ আবার বলছেন, পাশে ধান খেতে আসে প্রচুর বক, সারস— তাদের থেকেও জীবাণু ছড়িয়ে থাকতে পারে। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে।
পঞ্চায়েত প্রধান তপন মণ্ডল বলেন, “ওই এলাকায় শুয়োরের চাষ নেই। তবে স্বাস্থ্য দফতর যা পরামর্শ দেবে, সেই অনুযায়ী চলতে হবে। আমরা তৈরি আছি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “গত বুধবার এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিল প্রতিনিধি দল। ফের যাবে। কিন্তু সংক্রমণ আটকানো প্রায় অসম্ভব।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যে ফের সোয়াইন ফ্লু ছড়াচ্ছে। তবে গত বছরের থেকে রোগের প্রকোপ কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy