আশঙ্কা করেছিলেন বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা। আর সেটাই সত্যি হল হাওড়ার আমতা ১ ব্লকে।
বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় রাজ্যের বেশ কিছু পঞ্চায়েত প্রধানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল দামি অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন। উদ্দেশ্য, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পে পঞ্চায়েতগুলিতে যে সব উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য যেন প্রধানরা ওই ফোনে সংগ্রহ করে রাখেন। ওই ফোন যাতে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা না হয় সে জন্য যে প্রকল্পে এই উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই বিশেষ সেলের তরফে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে সতর্কও করা হয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে ওই ফোনে উন্নয়ন কাজ সংক্রান্ত সংগৃহীত তথ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু নির্দেশের পরেও আমতা-১ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পে কাজ চলছে এমন পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে তারা যেন তাদের হেফাজতে থাকা মোবাইল ফোনগুলি অবিলম্বে বিডিও-র কাছে জমা দেয়। বিডিওর বক্তব্য, ‘‘আমাদের তো নির্বাচনের সময়ে অনেক ফোন লাগবে। তাই প্রধানদের কাছ থেকে এই ফোনগুলি নেওয়া হচ্ছে। কিনতে গেলে তো খরচ বাড়বে। নির্বাচন মিটে গেলে ফোনগুলি ফের প্রধানদের ফেরত দেওয়া হবে।’’
রাজ্যে নটি জেলার ৯৯৬টি নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতে গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় উন্নয়নের কাজ চলছে। এ বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। যে প্রকল্পে কাজ হচ্ছে তার নাম আইএসজিপি (গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বশক্তিকরণ প্রকল্প)। হাওড়ার ১৫৭টির মধ্যে ৯৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আইএসজিপি প্রকল্পে কাজ চলছে। প্রকল্পে গ্রামে ঢালাই রাস্তা, বাজার চত্বর তৈরি, সেচ প্রকল্প প্রভৃতি কাজ হচ্ছে। কাজগুলি ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তার নজরদারির জন্যই প্রধানদের হাতে বিশ্বব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে বছর দুয়েক আগে অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া হয়। যাতে কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ওই ফোনের মাধ্যমে দিল্লিতে বসেই জানতে পারেন বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা। বিশ্বব্যাঙ্কের তরফে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারও দেওয়া হয় এই ফোন ব্যবহারের জন্য।
আমতা ১ ব্লকের ১৩টির মধ্যে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আইএসজিপি প্রকল্পের কাজ চলছে। সেই কারণে ওই সব পঞ্চায়েতের প্রধানদেরও দেওয়া হয়েছে অ্যানড্রয়েড ফোন। কিন্তু সম্প্রতি প্রধানদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে তাঁরা যেন ফোনগুলি ব্লক প্রশাসনে জমা দেন। এতে ফাঁপরে পড়েছেন প্রধানেরা। একটি পঞ্চায়েতের প্রধান জানান, তাঁর এলাকায় যে সব প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলির তথ্য এই ফোনে রাখার কথা। নির্বাচন পর্ব মিটতে সময় লাগবে অন্তত তিন মাস। তখন কাজের তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। একই কথা শুনিয়েছেন অন্য প্রধানেরাও।
রাজ্যের আইএসজিপি সেলের এক কর্তা জানান, তাঁদের আশঙ্কা ছিল, বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া ফোন নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। সেই কারণেই চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওই ফোন শুধুমাত্র যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে সেই কাজেই ব্যবহার করতে হবে। এর অন্যথা করা যাবে না। আমতা ১ ব্লকে কেন এই ঘটনা ঘটল সে বিষয়ে তাঁরা খোঁজ নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy