Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কে ঢুকে ডাকাতরা বলল একটু সাহায্য করবেন

ব্যাঙ্কে ঢুকেই ঠান্ডা গলায় তাদের আবেদন ছিল—‘‘একটু সহযোগিতা করবেন প্লিজ। আপনাদের কোনও ক্ষতি করতে আসিনি। টাকাটা নিয়েই চলে যাব।’’ তাড়াহুড়ো, হইচই, শাসানি এমনকী চেঁচামেচি—ব্যাঙ্ক ডাকাতির চেনা হট্টগোল এক্কেবারে অনুপস্থিত। মঙ্গলবার সকালে, ব্যান্ডেলের জিটি রোডের ধারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় নিতান্ত আটপৌরে চেহারার জনা দশেক দুষ্কৃতী, শান্ত পায়ে ঢুকে ততোধিক ঠাণ্ডা গলায় গ্রাহক ও ব্যাঙ্ককর্মীদের অনুরোধ-উপরোধ করে লুঠ করে নিয়ে গেল প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৬

ব্যাঙ্কে ঢুকেই ঠান্ডা গলায় তাদের আবেদন ছিল—‘‘একটু সহযোগিতা করবেন প্লিজ। আপনাদের কোনও ক্ষতি করতে আসিনি। টাকাটা নিয়েই চলে যাব।’’

তাড়াহুড়ো, হইচই, শাসানি এমনকী চেঁচামেচি—ব্যাঙ্ক ডাকাতির চেনা হট্টগোল এক্কেবারে অনুপস্থিত।

মঙ্গলবার সকালে, ব্যান্ডেলের জিটি রোডের ধারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় নিতান্ত আটপৌরে চেহারার জনা দশেক দুষ্কৃতী, শান্ত পায়ে ঢুকে ততোধিক ঠাণ্ডা গলায় গ্রাহক ও ব্যাঙ্ককর্মীদের অনুরোধ-উপরোধ করে লুঠ করে নিয়ে গেল প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা।

এ দিন সকালে, তখন সবে খুলেছে ব্যাঙ্ক। প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে সিঁড়ির মুখে মাঝবয়সী প্রহরী সবে বসতে যাবেন, জনা দশের দুষ্কৃতী তর তর করে উঠে এল দোতলায় ব্যাঙ্কের ওই শাখায়।

প্রহরীর মাথায় চেপে ধরা হল আগ্নেয়াস্ত্র। হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হল বন্দুক। তারপর নির্দেশ এল, ‘‘কথা না বাড়িয়ে ঢুকে পড়ুন ব্যাঙ্কে।’’ আর তাঁর চেয়ারে প্রহরী সেজে বসে পড়ল দলের এক সাগরেদ।

ব্যাঙ্ক কর্মীরা জানান, ডাকাতি করার সময়েও দুষ্কৃতীদের গলায় কোনও উত্তাপ বা উষ্মার ছোঁয়া পাননি তাঁরা। একই অভিজ্ঞতা ব্যাঙ্কে আসা গ্রাহকদের।

দুষ্কৃতীরা সটান ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় চাবি চেয়ে নিয়ে ভল্ট খুলে দ্রুত বের করে নেয় টাকার বান্ডিল।

এই সময়ে গ্রাহকদের অভয় দিয়ে দুষ্কৃতীদের এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘প্লিজ কেউ চেঁচামেচি করবেন না। আপনাদের কাছ থেকে কিছুই নেব না আমরা। যা নেওয়ার ব্যাঙ্ক থেকেই নেব। শুধু মোবাইলগুলো এক জায়গায় রাখুন। ফোন করার চেষ্টা করে বিপদ বাড়াবেন না প্লিজ।’’

বলা বাহুল্য, ব্যাঙ্কে উপস্থিত জনা কয়েক গ্রাহক তাদের কথার অমান্য করেননি। ব্যাঙ্কেও ওই সময়ে জনা দশেক কর্মী এসে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেও মোবাইল নিয়ে রেখে দেওয়া হয় একটি ব্যাগে। তারপর সবাইকে ভল্টে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করার আগে ডাকাতরা জানিয়ে যায়, ‘‘একটু অসুবিধা হবে। তবে পুলিশ এসে নিশ্চয় আপনাদের উদ্ধার করবে।’’

এ দিন সকালে ব্যাঙ্কে উপস্থিত ছিলেন ব্যান্ডেলের বাসিন্দা গোপাল চাকি। তিনি বলেন, ‘‘ডাকাতদের কনফিডেন্স দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। জোরে কথা নেই, হুমকি নেই। চুপচাপ ডাকাতি করে বেরিয়ে গেল।’’ সরকারি কর্মী সাধনা দাসও বেতন তুলতে ব্যাঙ্কে এসেছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘টাকা তুলতে যাব, এমন সময় ডাকাত পড়ল। গম্ভীর গলায় বলল, মোবাইলগুলো এখন দিয়ে দিন, পরে যে যার নিজেরটা বেছে নিয়ে যাবেন। কোনও তাড়াহুড়ো নেই।’’

ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অনুজ কুমার বলেন, ‘‘ডাকাতি যে হল বুঝতেই পারলাম না। ঘটনাটা হঠাৎই ঘটে গেল।’’ তবে ডাকাতির আগে, দুষ্কৃতীরা যে ওই শাখায় বেশ কয়েক দিন ধরে নজরদারি চালিয়েছিল তা তাদের মিনিট কুড়ির ‘নিশ্চুপ অপারেশন’ থেকেই স্পষ্ট।

হুগলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও অবশ্য বলছেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে কয়েক জায়গায় তল্লাশিও শুরু হয়েছে।’’ ঠান্ডা গলায় তিনিও জানাচ্ছেন, শীঘ্রই ধরা পড়বে দুষ্কৃতীরা।

abpnewsletters bank bandel money robber police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy