Advertisement
E-Paper

তাড়া করে দুষ্কৃতী ধরল পুলিশ

রাত আড়াইটা। সুনসান রাস্তায় ছুটছে ছিনতাইকারী। তাকে ধরতে ছুটছে পুলিশ। কিছুক্ষণ চোর-পুলিশের লুকোচুরির শেষে বমাল পাকড়াও ছিনতাইকারী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৮:০১
এএসআই সুব্রত ধামালি। —নিজস্ব চিত্র।

এএসআই সুব্রত ধামালি। —নিজস্ব চিত্র।

রাত আড়াইটা। সুনসান রাস্তায় ছুটছে ছিনতাইকারী। তাকে ধরতে ছুটছে পুলিশ। কিছুক্ষণ চোর-পুলিশের লুকোচুরির শেষে বমাল পাকড়াও ছিনতাইকারী। উদ্ধার হল ছিনতাই করা টাকাও। বৃহস্পতিবার রাতে এমন ঘটনায় উলুবেড়িয়া থানার এক এএসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের তৎপরতা এলাকায় সাড়া ফেলে দেয়।

ঠিক কী হয়েছিল ওই রাতে। উলুবেড়িয়ার নতিবপুরের বাসিন্দা অমিত দাসের ভাগ্নে উলুবেড়িয়া স্টেশন রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি। রাতে টাকার দরকার হওয়ায় অমিতবাবু একটি গাড়ি নিয়ে ওটি (ওড়িশা ট্রাঙ্ক) রোডের ধারে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে টাকা তুলতে যান। তিনি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এটিএম থেকে টাকা তুলে গাড়িতে উঠে চালাতে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির হয়ে যায় দুই যুবক। একজনের হাতে ভোজালি। অন্যজন গাড়ির জানালা দিয়ে ভিতরে হাত ঢুকিয়ে অমিতবাবুর হাত চেপে ধরে। অন্যজন ভোজালি নিয়ে তাঁকে ভয় দেখাতে থাকে। তাঁর গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেয় একজন। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘আমাকে ওরা বলছিল, তোর কাছে যা আছে দিয়ে দে।’’ কিন্তু তিনি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। হাতাহাতির মধ্যে একজন ভোজালি দিয়ে অমিতবাবুর পিঠে আঘাত করে। তবে আঘাত গুরুতর নয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর পরই রাস্তার উপরে দুষ্কৃতীরা আড়াআড়ি বেঞ্চ দিয়ে গাড়ি আটকে দেয়।

ধস্তাধস্তি চলার সময়েই ওই এলাকা থেকে উলুবেড়িয়া থানায় কেউ ফোন করে ঘটনাটি জানান। যদিও পুলিশ তার নাম জানাতে চায়নি। খবর পেয়েই থানা থেকে ওই এলাকায় রাতের টহলদারি দলকে বিষয়টি জানানো হয়। এএসআই সুব্রত ধামালির নেতৃত্বে দুই কনস্টেবল-সহ তিনজনের টহলদারি দলটি তখন ছিল গঙ্গারামপুরে। সেখান থেকে দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসেন তাঁরা। পুলিশকে দেখেই দুষ্কৃতীরা পালানোর চেষ্টা করে। দু’জনেই ঢুকে পড়ে রাস্তার পাশে একটি গলিতে। একজনকে দেখা না গেলেও অন্যজন বাজারপাড়ার গ‌লি ধরে ছুটতে থাকে। পিছনে ধাওয়া করেন সুব্রতবাবু। তাঁর পিছনে রাইফেল নিয়ে দৌড়াতে থাকেন দুই কনস্টেবল। গলি পেরিয়ে ওই দুষ্কৃতী রাস্তায় ফের ওটি রোডে উঠে পড়ে। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না সুব্রতবাবু। শেষ পর্যন্ত উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের কাছে ওই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন তিনি। নিয়ে যান থানায়। থানায় আসেন অমিতবাবুও। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম ইব্রাহিম মোল্লা। বাড়ি বাজারপাড়া এলাকাতেই। তাকে জেরা করে অন্যজনের খোঁজ চলছে।

স্থানীয় মানুষ পুলিশের এমন তৎপরতার প্রশংসা করলেও বিষয়টি নিয়ে কোনও তাপউত্তাপ নেই সুব্রতবাবুর। এমনকী এই নিয়ে কিছু বলতেও চাননি তিনি। তবে থানা সূত্রেই জানা গিয়েছে, সুব্রতবাবুকে খবর দেওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে চালককে সরিয়ে তিনি নিজেই স্টিয়ারিং ধরেন। গাড়ি চালানোয় সুনাম থাকা সুব্রতবাবু ঝড়ের গতিতে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। সুব্রতবাবুর ভূমিকার প্রশংসা করে জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘ছিনতাইবাজদের ধরতে যে তৎপরতা সুব্রতবাবু দেখিয়েছেন তা ইতিবাচক। ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

আর অমিতবাবুর কথায়, ‘‘দেখলাম পুলিশ কী ভাবে দুষ্কৃতীকে ধরল। পুলিশ এ ভাবে তৎপর হলে এলাকায় চুরি-ছিনতাই কমতে বাধ্য।’’

বছর ছেচল্লিশের সুব্রতবাবুর বাড়ি হাওড়ারই সাঁকরাইলের ধুলাগড়িতে। আদতে স্পোর্টসম্যান সুব্রতবাবু দীর্ঘদিন রাজ্য পুলিশ দলের হয়ে সুপার ডিভিশন ফুটবল লিগ খেলেছেন। পুলিশের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অ্যাথলেটিক মিটেও যোগ দিয়েছেন। উলুবেড়িয়া থানায় আসার আগে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন থানা এবং হাইওয়ে ট্রাফিকে কাজ করেছেন। সেখানেও দুষ্কৃতী ধরতে বেপরোয়া ছিলেন তিনি। দুষ্কৃতী ধরতে বার বার কৃতিত্বের পরিচয় দেওয়ার পরেও সুব্রতবাবুর একটাই কথা, ‘‘এর মধ্যে কৃতিত্বের কিছু নেই। ‘‘যখন যেখানে থেকেছি কর্তব্য করার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও করব।’’

Loot Police Miscreants
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy