Advertisement
০৩ মে ২০২৪

গঙ্গায় ভেসে বৃদ্ধার দেহ, উদ্ধারে ৩ ঘণ্টা

সকাল সাড়ে ৮টা। বালির কেদার ঘাটে গঙ্গায় ভেসে আসে এক বৃদ্ধার দেহ। তা দেখেই খবর যায় স্থানীয় পুলিশের কাছে। কিন্তু গঙ্গার জলে দেহ ভেসে থাকায় তা উদ্ধারের জন্য ‘জল পুলিশ’-এর (রিভার ট্রাফিক) কাছে খবর পাঠিয়েই নিজেদের দায় সারে স্থানীয় থানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

সকাল সাড়ে ৮টা। বালির কেদার ঘাটে গঙ্গায় ভেসে আসে এক বৃদ্ধার দেহ। তা দেখেই খবর যায় স্থানীয় পুলিশের কাছে। কিন্তু গঙ্গার জলে দেহ ভেসে থাকায় তা উদ্ধারের জন্য ‘জল পুলিশ’-এর (রিভার ট্রাফিক) কাছে খবর পাঠিয়েই নিজেদের দায় সারে স্থানীয় থানা। এর পরে প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে গেলেও ভাটার কারণে এসে পৌঁছতে পারেনি জল পুলিশের দল। শেষে স্থানীয়দের ক্ষোভের

মুখে পড়ে বালি থানার পুলিশকর্মীদেরই জলে নেমে ওই দেহ উদ্ধার করতে হয়।

বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গঙ্গায় যে কোনও ডুবে যাওয়ার ঘটনাতেই কলকাতা লাগোয়া জেলার থানা থেকে খবর পাঠানো হয় কলকাতা পুলিশের রিভার ট্রাফিককে। সেই খবর পেয়ে উত্তর বন্দর থানা থেকে লঞ্চ ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালায় কিংবা দেহ উদ্ধার করে। দীর্ঘ দিন ধরেই এই বোঝাপড়া চলে আসছে ‘জল পুলিশ’ ও ‘স্থল পুলিশ’-এর মধ্যে।

কিন্তু এ দিনের এই ঘটনার পরে উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কোনও গঙ্গার ঘাট কিংবা পাড়ের কাছে কোনও দেহ ভেসে এলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার না করে জল-স্থলের ভাগ করা হয় কেন? যে সময়ে দুই পুলিশের মধ্যে এই খবর চালাচালি কিংবা দায়িত্ব ভাগাভাগি চলে, তখন তো ভেসে আসা মানুষটির প্রাণও থাকতে পারে। বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশাও থাকতে পারে। সময় নষ্ট না করে মানুষটিকে আগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা হয় না কেন?

এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ না করলেও পুলিশকর্তারা অবশ্য বলছেন অন্য কথা। এক পুলিশকর্তা জানান, গঙ্গায় মূলত নজরদারি চালানোর কাজ রিভার ট্রাফিকের। সেই সময়ে জলে কোনও দেহ ভাসতে দেখলে রিভার ট্রাফিক তা উদ্ধার করে। কলকাতা এলাকার বাইরে হলে যে জেলায় দেহটি উদ্ধার হয়, সেখানকার থানাকে খবর দেওয়া হয়। তবে গঙ্গায় নেমে দেহ উদ্ধার করার মতো পরিকাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি জেলা পুলিশের থানাগুলিতে। কলকাতার যেহেতু আলাদা জল পুলিশ বিভাগ রয়েছে, তাই তাদের খবর দেওয়া হয়। কেননা লঞ্চ বা ডুবুরির ব্যবস্থা একমাত্র কলকাতার রিভার ট্রাফিক পুলিশের রয়েছে।

এ দিন সকালে বালির কেদার ঘাটে চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধা মিনু রায়ের দেহ ভেসে আসার পরেও একই সমস্যা হয়েছিল বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। তবে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে ভবিষ্যতে হাওড়া সিটি পুলিশের নিজস্ব রিভার ট্রাফিক বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলেই জানান পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। রিভার ট্রাফিক গার্ড বানাতে গঙ্গার পাড়ে জমির প্রয়োজনে পোর্ট ট্রাস্টকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিনই ভোরে বালি নিশ্চিন্দা চট্টলপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বালির কোনও একটি গঙ্গার ঘাটে স্নান করে পুজোর ফুল কিনে ফিরতেন মিনুদেবী। এ দিন সকালে দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় তাঁর ছেলে বালি থানা পৌঁছে জানতে পারেন জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার। অন্য দিকে, এ দিনই দুপুরে গোলাবাড়ির লবনগোলা ঘাটে গঙ্গায় স্নান করতে নেমেছিল চার বালক। আচমকাই তাদের মধ্যে এক জন জলে নিখোঁজ হয়ে যায়। তা দেখেই বাকি তিন জন পালিয়ে যায়। রাত পর্য়ন্ত ওই বালকের পরিচয় জানা যায়নি। তার কোনও খোঁজও মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police dead body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE