গোন্দলপাড়া কাছারি ঘাটের মণ্ডপ।
দিনের আলো নিভু নিভু হতেই এ তল্লাটে রাতের আলো জ্বলে উঠল। চন্দননগরের ঐতিহাসিক স্ট্র্যান্ড ঘাটের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউটের প্রান্ত থেকে গঙ্গার ধার ঘেঁষে সোজা হাঁটাপথ। জগদ্ধাত্রীর আলোর গেটের বর্ণময় ছটায় ভেঙে যাচ্ছে গঙ্গা। সে জলছবি থেকে চোখ ফেরানো দায়। চন্দননগরে যেন ফিুরে এসেছে দীপাবলি।
রাস্তা ধরে এগোলেই একের পর এক আলোক ম্যাজিক। উদির্বাজার, বোরোকালীতলা, বোরোচাঁপাতলা ধরে লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার এলাকা দিয়ে জিটি রোডে পড়তেই আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল। কোনটা ছেড়ে কোনটায় চোখ রাখবেন দর্শনার্থীরা। আদতে বড় বড় কাটআউট আর ফ্রেমে বাঁধানো আলোকমালা চন্দননগরের আলোর ঐতিহ্য। শ্রীধরের হাত ঘুরে এখনকার বাবু পালেরা সেই ঐতিহ্যের উত্তরসূরী। তার সঙ্গে গত কয়েক বছরে যোগ হয়েছে কালো ফ্রেমের মধ্যে বড় বড় এলইডি আলোর বোর্ড। হাল আমলে থিমের পুজো নিয়ে মাতামাতির যে ঢল কলকাতায় আছড়ে পড়েছে তার ছোঁয়া আগেই লেগেছে এখানে। প্রতিমায় সাবেক টান বজায় রাখার চেষ্টা হলে মণ্ডপে এবং আলোয় থিমের সগর্ব উপস্থিতি। যা চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
আলোকলজ্জা।
যদিও আলোর খেলায় থিমের প্রয়োগ চন্দননগরের নিজস্ব এবং পুরনো ঘরানা। প্রতি বছরেই সম সাময়িক, বহু আলোচিত বিষয়বস্তুকে সুচারু ভাবে হাজির করা হয় আলোকশিল্পে। কী থাকে না সেখথানে! সাক্ষরতার সুফল থেকে কন্যাশ্রী। মিকি মাউস, জীবজন্তুর খেলা। রবীন্দ্রনাথ থেকে বিদ্যাসাগর হয়ে বিবেকানন্দ—বাঙালির সব প্রণম্যরাই হাজির চন্দননগরের আলোয়। তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও চোখে পড়ার মতো। রাস্তার এপার থেকে উল্টো দিকে যার গেট যত বড় সেই পুজো উদ্যোক্তাদের বুক তত চওড়া।
মানকুণ্ডুর বালক সঙ্ঘের মণ্ডপ। ছবি: তাপস ঘোষ ও দীপঙ্কর দে।
গত কয়েকদিন ধরে মুখ ভার করে রেখেছে আবহাওয়া। তা দেখে মন খারাপ সকলেরই। তা হলে কী পুজোটা এ ভাবেই কাটবে! চলছিল ইতিউতি জল্পনা। ষষ্ঠীর সকালে সূর্য ঝকঝকে মুখ বের করতেই কিছুটা স্বস্তি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মুখে হাসি ফুটতেই সোল্লাসে পড়ে নেমে পড়ল ভিড়। দুপুর গড়াতেই জিটি রোডে তালডাঙার মোড়, বড়বাজার, বাগবাজার, মানকুণ্ডু স্টেশন রোড, চন্দননগর স্টেশন রোড, ভদ্রেশ্বরে তেঁতুলতলা মোড়ে মানুষের ঢল। ঘড়ির কাঁটা যতই রাত ছুঁয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার প্রাবল্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy