Advertisement
১৮ মে ২০২৪
পুরসভার ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

বাজার যেন জতুগৃহ, প্রশ্নে নিরাপত্তাই

সপ্তাহ খানেক আগে পুড়ে গিয়েছিল দমদমের গোরাবাজার। উঠেছিল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। সেই ঘটনা থেকে আদৌ কি কোনও শিক্ষা নিয়েছে দুই জেলার বড় বাজারগুলি? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ নজরে উলুবেড়িয়ার হেমন্ত বসু মার্কেট। সপ্তাহ খানেক আগে পুড়ে গিয়েছিল দমদমের গোরাবাজার। উঠেছিল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। সেই ঘটনা থেকে আদৌ কি কোনও শিক্ষা নিয়েছে দুই জেলার বড় বাজারগুলি? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ নজরে উলুবেড়িয়ার হেমন্ত বসু মার্কেট।

বিপদ: এমন সরু-ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ছবি: সুব্রত জানা

বিপদ: এমন সরু-ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

বাজার তো নয়, যেন আস্ত জতুগৃহ!

পায়রার খোপের মতো ছোট ছোট স্টল। মাথায় অ্যাসবেসটস ও টিনের ছাউনি। হাঁটাচলার রাস্তা সঙ্কীর্ণ। চারদিকে দাহ্য বস্তু। রয়েছে কিছু কাপড়ের দোকানও। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে উনুন জ্বালিয়ে চপ, লুচি-তরকারির দোকানও চলছে রমরমিয়ে। কিন্তু কোথাও নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা।

এ ভাবেই চলছে উলুবেড়িয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের ‘হেমন্ত বসু মার্কেট’। কিছুদিন আগেই দমদমের গোরাবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। তার পরে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারের অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উলুবেড়িয়ার এই বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও যে প্রশ্ন রয়েছে, মানছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ জন্য তাঁরা দায় চাপিয়েছেন পুরসভার উপরে।

পুরসভার জমিতে বাজারটি চালু হয় ১৯৮৬ সালের ২৪ অগস্ট। তখন যাঁরা ফুটপাথে ব্যবসা করতেন, তাঁদেরই মূলত স্টল দেয় পুরসভা। মোট ৮০টি স্টল রয়েছে বাজারে। এর জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বাজারকে ঘিরে রয়েছে মেয়েদের স্কুল, রবীন্দ্রভবন, ইনস্টিটিউট হলের মতো প্রতিষ্ঠান। অগ্নিকাণ্ড হলে ওই সব প্রতিষ্ঠানেও যে তার আঁচ পৌঁছবে, মানছেন অনেকেই। খোলা উনুন থেকে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে বলে স্টল-মালিকদের একটা বড় অংশই স্বীকার করলেন। উলুবেড়িয়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অবৈজ্ঞানিক ভাবে বাজারটি গড়ে উঠেছে। অগ্নি নির্বাপণ বা জল সরবরাহ ব্যবস্থা— কোনও কিছুই ঠিক নেই। পুরসভার উচিত বাজারটিকে ভেঙে সব নিয়ম মেনে ফের নতুন করে তৈরি করা।’’

সকাল-বিকেল ক্রেতাদের ভিড়ে গিজগিজ করে স্টলগুলি। তখন পাশাপাশি হাঁটাই দুষ্কর। আগুন লাগলে দমকল কর্মীরা অত সঙ্কীর্ণ রাস্তায় কাজ করবেন কী করে, রয়েছে সেই প্রশ্নও। কোথাও নেই কোনও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুরসভা যে হেতু তাঁদের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া নেয়, তাই নিরাপত্তার দিকটি পুরসভারই দেখা উচিত। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে পুরসভা কোনও আলোচনা করে না। কাপড়ের ব্যবসায়ী চণ্ডী সিংহ, বাবুলাল মণ্ডলরা বলেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগই নেই। ইদানীং ওরা ভাড়াও নিতে আসছে না। ওদেরই তো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কিনা দেখা উচিত।’’ এ বিষয়ে কথা বলতে গেলেও পুরসভা কর্ণপাত করে না বলে অভিযোগ চণ্ডীবাবুদের।

কী বলছে পুরসভা?

ওই বাজারের জন্য অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ার চেষ্টা চলছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি। উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান আব্বাসুদ্দিন খান বলেন, ‘‘বাজারটি তৈরির সময় কোনও পরিকল্পনার ছাপ ছিল না। নতুন করে বাজারটি গড়ার জন্য আমরা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা-সহ নতুন করে বাজারটিকে গড়ে তোলা হবে।’’

আপাতত সে দিনের অপেক্ষাতেই রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bazar Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE