Advertisement
০৫ মে ২০২৪
উলুবেড়িয়া: সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা

বেআইনি নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরেই

আর পাঁচটা শহরের মতো উলুবেড়িয়াতেও গড়ে উঠেছে বহুতল বাড়ি। বেশিরভাগই তৈরি করছেন প্রোমোটাররা। কিন্তু সব বাড়িই কী নিয়ম মেনে হয়েছে ? অভিযোগ, অনেক বহুতলের ক্ষেত্রেই পুর আইনের কোনও তোয়াক্কা না করেই নির্মাণ হয়েছে। আর তারই সূত্রে ধরে উঠেছে দুর্নীতির স্বাভাবিক প্রশ্ন।

নুরুল অবসার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

আর পাঁচটা শহরের মতো উলুবেড়িয়াতেও গড়ে উঠেছে বহুতল বাড়ি। বেশিরভাগই তৈরি করছেন প্রোমোটাররা। কিন্তু সব বাড়িই কী নিয়ম মেনে হয়েছে ? অভিযোগ, অনেক বহুতলের ক্ষেত্রেই পুর আইনের কোনও তোয়াক্কা না করেই নির্মাণ হয়েছে। আর তারই সূত্রে ধরে উঠেছে দুর্নীতির স্বাভাবিক প্রশ্ন।

পুরসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। প্রথম এক বছর বোর্ড চালায় কংগ্রেস। কিন্তু তারপরে কংগ্রেস ভেঙে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দেন। বোর্ড চলে যায় এককভাবে তৃণমূলের হাতে। অভিযোগ, তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতা দখল করার পরেই বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও বেনিয়মের শুরু।

পুরসভায় বাড়ির নকশা অনুমোদনের জন্য একটি কমিটি আছে। নকশা প্রাথমিকভাবে সেই কমিটির কাছে জমা পড়ে। কমিটি প্রস্তাবিত বাড়ির জায়গা খতিয়ে দেখে তার পরে নকশা অনুমোদন করে। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে ঘরে বসে কমিটি বাড়ির নকশা অনুমোদন করত। জায়গার অবস্থান খতিয়ে দেখা হত না। পরবর্তিকালে বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে দেখা দিত নানা সমস্যা। তৃণমূলের পুরবোর্ড থাকাকালীন বার বারই এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এমনকী প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেও।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরসভার তৎকালীন নির্বাহী আধিকারিক নিজে তদন্তে নামেন। দেখা যায় বাড়িগুলি শুধু যে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছে তা নয়। এই সব বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল আইনও মানা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করার পরে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষকে একটি ‘নোট’ দেন তৎকালীন নির্বাহী আধিকারিক। তাতে তিনি জানান, বাড়ির নকশা অনুমোদন করার জন্য যে কমিটি আছে তার সদস্যদের পক্ষে প্রতিটি জায়গা পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নতুন একটি কমিটি গড়ার কথাও বলেন তিনি।

তাঁর পরামর্শ মেনে তৎকালীন চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেন। তাতে রাখা হয় দু’জন চেয়ারম্যান পারিষদ এবং একজন কাউন্সিলারকে। বাকি দুই সদস্যদের একজন হলেন পুরসভার তৎকালীন নির্বাহী আধিকারিক এবং পুরসভার সহকারী বাস্তুকার। কমিটির কাজও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। ঠিক হয়, নকশা অনুমোদনের জন্য পুরসভার নির্দিষ্ট কমিটির কাছে যে সব আবেদন জমা পড়বে সেই সব প্রস্তাবিত বাড়ি তৈরির জায়গা নতুন কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে বাড়ির অনুমোদন দেবে পুরসভা।

কিন্তু যে দিন চেয়ারম্যান এই কমিটি তৈরি করেন, ঠিক তার পরের দিনই তিনি তা ভেঙে দেন। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করেই দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরদার হয়ে ওঠে। অভিযোগ তির ওঠে তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমা খানের দিকে। বাড়ির নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত পুরসভার যে বিশেষ কমিটি ছিল তার দায়িত্বে ছিলেন নাজিমা। অভিযোগ, নাজিমার স্বামী বাপি খান প্রতিদিন পুরসভায় এসে ভাইস চেয়ারম্যানের ঘরে বসে থাকতেন। প্রোমোটার এবং দালালদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বেআইনি বাড়ির নকশা অনুমোদনে মদত দিতেন। আরও অভিযোগ ওঠে, বাড়ি তৈরির জায়গা সরেজমিন দেখার জন্য নতুন যে কমিটি গড়া হয় সেই কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য নাজিমা এবং বাপি খানই উদ্যোগী হয়েছিলেন।

এই সব অভিযোগ নিয়ে সেই সময় পুরসভা তোলপাড় হয়ে ওঠে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও নড়েচড়ে বসেন। বলির পাঁঠা করা হয় পুরসভার তৎকালীন নির্বাহী আধিকারিককে। তিনি পদত্যাগ করেন। অভিযোগ, তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর পরে বিষয়টি সাময়িকভাবে ধামাচাপা পড়ে য়ায়। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

এ বার নির্বাচনে নাজিমাকে টিকিট দেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁর স্বামী বাপি খান টিকিট চাইলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি। নাজিমার ওয়ার্ড আগে ছিল ১৮ নম্বর। বর্তমানে এটি ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। দলের কাছে স্ত্রী বা নিজের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাপি। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তৃণমূল নেতারা স্বীকার করেছেন, নাজিমার বিরুদ্ধে বাড়ির নকশা অনুমোদন-সহ বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। সেই কারণে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বাপির দাবি, ‘‘আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। নেতৃত্বকে আমার স্ত্রীর বিষয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে। তার জবাব দিতেই আমি নির্দল হিসাবে নিবার্চনে দাঁড়িয়েছি।’’

আর এটাকেই নির্বাচনী হাতিয়ার করেছে বামফ্রন্ট, বিজেপি এবং কংগ্রের। তাদের অভিযোগ, ভাইস চেয়ারম্যান একাই সব দুর্নীতি করেছেন এটা মেনে নেওয়া শক্ত। তৃণমূলের আরও রাঘব-বোয়াল নিশ্চয় এতে জড়িত। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, পায়ের তলায় মাটি নেই জেনে বিরোধীরা এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE