Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩
আনন্দবাজারের খবরের জের
Hooghly Chinsurah Municipality

চুঁচুড়ায় পুর-পদে নিয়োগ বাতিল

লকডাউন পর্বেই হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায় ‘গ্রুপ-সি’ এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে চাকরি পান অন্তত ৫৪ জন।

প্রতিবাদ: পুরসভার সামনে চলছে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রতিবাদ: পুরসভার সামনে চলছে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০৩:২৬
Share: Save:

হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগে যে গরমিল রয়েছে, তা কার্যত মেনে নিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পত্রপাঠ ওই নিয়োগ বাতিলও করা হল।

ওই পুরসভায় ‘গ্রুপ-সি’ এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে অন্তত ৫৪ জনের নিয়োগ নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সে খবর সোমবারই আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়েছে। তারপর এ দিনই কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অস্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই হয়। তাই ওই নিয়োগ বাতিল করা হল। নতুন করে সেখানে নিয়োগের প্রক্রিয়া ফের শুরু হবে।’’ শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, ‘‘ভাবমূর্তি এবং স্বচ্ছতার প্রশ্নে দল আপস করবে না। আমি পুরমন্ত্রীকে রবিবারই জানিয়েছিলাম, ওই নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বিষয়টিকে মান্যতা দেন।’’

লকডাউন পর্বেই ওই পুরসভায় ‘গ্রুপ-সি’ এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে চাকরি পান অন্তত ৫৪ জন। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি তৃণমূল নেতাকর্মী বা তাঁদের আত্মীয়, এমনই অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। ‘গ্রুপ-ডি’ পদে নতুন চাকরিতে যোগ দেন ওই পুরসভার এক বিদায়ী কাউন্সিলরও। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বিরোধীরাও সরব হন।

ওই পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা বর্তমান প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় প্রথমে দুর্নীতির অভিযোগ মানেননি। সোমবার তাঁকে পুরসভায় দেখা যায়নি। আসেননি অন্য কর্তারা এবং কর্মীরা। তবে গৌরীকান্তবাবু বলেন, ‘‘আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছি। ফের নতুন করে নিয়োগ হবে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে।’’

দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল বিরোধীরা। এ দিন ময়দানে নামে সিপিএম এবং বিজেপি। তাতে যোগ দেন পুরসভার সাফাইকর্মী-সহ অনেক কর্মীরাও। সকাল থেকেই পুরভবন চত্বর সরগরম হয়ে ওঠে। শুধু নিয়োগ বাতিল করা নয়, দুর্নীতির নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও শাস্তির দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা। সাফাইকর্মীরা প্রথমে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হটিয়ে দিলেও পরে গেরুয়া-শিবির সেখানে ফিরে এসে বিক্ষোভ দেখায়। পুরসভার অন্য গেট দিয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। পুলিশ এবং র‌্যাফ পরিস্থিতি সামাল দিতে আসে। বেলা বাড়তে ভিড় পাতলা হয়।

আন্দোলনকারী সাফাইকর্মীদের মধ্যে গৌরী রাজবংশী বলেন, ‘‘পুরসভায় ১৫ বছর ধরে কাজ করছি। এখনও স্থায়ীপদে চাকরি হয়নি। এ বার আমরাই আমাদের হক বুঝে নেব।’’

বিজেপির হুগলি (সদর) সাংগঠনিক জেলা মণ্ডলের সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি নিয়ে সবর হয়েছি। এর নেপথ্যে শুধু পুর কর্তৃপক্ষ নন, অনেক
রাঘব-বোয়াল রয়েছেন। পুরসভায় তৃণমূলের একাংশের অঙ্গুলিহেলনেই এই দুর্নীতি হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে এর তদন্ত চাই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘শুধু চুঁচুড়া কেন? একটু তলিয়ে দেখলে উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া— সর্বত্রই এই সব বেআইনি নিয়োগের নজির মিলবে। আসলে শাসকদলের আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে ঠেকেছে। তাই শেষবেলায় ওরা যা খুশি করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE