এমনই হাল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মেলেনি বিকল্প জায়গা। তাই প্রয়োজন থাকলেও শুরু করা যায়নি শতাধিক বছরের পুরনো হাওড়ার রেজিস্ট্রি অফিস সংস্কারের কাজ। হাওড়া পুরসভার কাছে বিকল্প জায়গার আবেদন করা হলেও সেই জায়গা আজও মেলেনি। যার ফলে প্রায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে রেজিস্ট্রি অফিসের অফিসার ও কর্মীদের।
হাওড়া কোর্টের ভিতরে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী এই রেজিস্ট্রি অফিসটি সংস্কারের দাবি দীর্ঘ দিনের। মাস চারেক আগে বাড়িটি আমূল সংস্কারের জন্য ৯ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে পূর্ত দফতর। টেন্ডারও হয়ে যায়। তার পরেও কাজ শুরু করতে পারেনি পূর্ত দফতর।
কিন্তু কেন?
পূর্ত দফতরের বক্তব্য, বাড়িটির যা অবস্থা তাতে অফিস চলাকালীন সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই অফিসটি সাময়িক ভাবে স্থানান্তরিত না করা গেলে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ অফিস স্থানান্তরের জায়গাও মিলছে না। ওই বাড়িটি সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাওড়া পূর্ত দফতরের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কুন্তল পাল বলেন, ‘‘ওই অফিস স্থানান্তরিত না করা হলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। হাওড়া পুরসভার কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও জায়গা মেলেনি।’’
হাওড়া পুরসভার কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওনারা অফিস করার জন্য জায়গা চেয়েছিলেন ঠিকই। সেই জায়গা আমরা খুঁজছি। আশা করা যায়, পুরভবনে না হলেও অন্যত্র একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে সংস্কারের অভাবে জীর্ণ ওই দোতলা বাড়ির একাংশের কড়িবরগার ছাদ ভেঙে পড়ে। বর্তমানে বাড়িটির কোথাও চাঙড় ভেঙে পড়েছে, কোথাও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে পড়েছে। গোটা বাড়ির দেওয়াল সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অজস্র আলমারিতে রাখা বহু বছরের পুরনো দলিলও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জায়গার অভাবে মানুষের দাঁড়াবার জায়গা হয় না, বসা তো দূরের কথা। কর্মীদের অভিযোগ, এই বাড়িতে রয়েছে গোটা জেলার জমি ও বাড়ির ঐতিহাসিক দলিল।
শুধু তাই নয়, উনিশের শতকের আগে তৈরি হওয়া রেজিস্ট্রি অফিসের ওই বাড়িতেই ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ পা রেখেছিলেন। তিনি এসেছিলেন বেলুড় মঠের জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে। সে কথা মনে রেখে জেলা প্রশাসন ওই বাড়িটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে সামনে স্বামীজীর আবক্ষ মূর্তিও স্থাপন করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এর পরেও যে সরকারি অফিস থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় সেটির রক্ষণাবেক্ষণে কেন এই টালবাহানা?
হাওড়া রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মী সুখেন্দুকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘আমরা ওই অফিসে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। প্রায়ই ছাদের চাঙড় খসে পড়ে। অথচ নতুন রেজিস্ট্রি অফিস তৈরি তো দূরের কথা, মেরামতির কাজও শুরু হল না।’’
হাওড়া কোর্টের আইনজীবী দেবরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই দোতলা বাড়িতে জায়গার এতই অভাব যে মানুষ এসে দাঁড়াবার জায়গা পান না। মহিলাদের কোনও শৌচাগার নেই। এসি-ও লাগানো যায় না।’’
ডেপুটি রেজিস্ট্রার সতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে এই বাড়িতে স্থান সঙ্কুলান হয় না। আমারই কোনও ঘর নেই। পূর্ত দফতরকে আমরা বলেছি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy