চাকরি নেই। কিন্তু শরীর তো আছে। তাই অসুখ-বিসুখও আছে।
যাঁদের টাকা আছে, সমস্যাটা তাঁদের নয়। কিন্তু হুগলির বাঁশবেড়িয়া থেকে রিষড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার বহু শ্রমিক অবসরের পরে চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। কারণ, ইএসআই-এর সুবিধা আর মিলছিল না। তাই চিকিৎসা-সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় তাঁরা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন। চন্দননগরের দু’টি সংস্থার সহায়তায় অবসরপ্রাপ্ত ওই শ্রমিকেরা নিজেরাই প্রতি মাসে দু’দিন করে স্বাস্থ্য শিবির বসাচ্ছেন। শিবিরে শুধু রোগ নির্ণয়ই নয়, বিনামূল্যে ওষুধও মিলছে!
গত বছর জানুয়ারি মাস থেকে চন্দননগরের পরিবেশ সংস্থা ‘সবুজের অভিযান’-এর প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্য শিবিরটি বসছে প্রতি মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ রবিবার। প্রায় ২০০০ অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ওই শিবির থেকে উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু এই বাজারে কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে এমন নিখরচায় পরিষেবা?
বেশ কয়েক বছর আগে গোন্দলপাড়া জুটমিল থেকে অবসর নেন চন্দননগরের বাসিন্দা গৌতম গুহরায়। চাকরি করাকালীন তিনি ও পরিবারের সকলে ইএসআই-এর সুবিধা পেতেন। কিন্তু অবসরের পরে সেই সুবিধা আর না-মেলায় গৌতমবাবু চন্দননগরের ‘অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর মতো অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য শিবিরের পরিকল্পনা করেন। অন্য শ্রমিকেরাও তাতে উৎসাহিত হন। এগিয়ে আসে ওই সমিতি এবং চিকিৎসকদের সংস্থা ‘ডক্টর্স ফর ডেমোক্রেসি’। চিকিৎসকেরা শিবিরে নিখরচায় রোগী দেখেন।
কিন্তু শিবিরের খরচ ওঠে কী ভাবে?
শিবিরের অন্যতম আয়োজক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক প্রায় বিনা খরচে আমাদের শ্রমিক কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে কারখানা থেকে তাঁদের বকেয়া পেয়েছেন। তাঁরাই খুশি হয়ে শিবিরের খরচের টাকা দিচ্ছেন। অনেকে আবার আমাদের কাজে খুশি হয়ে দেন।’’ চিকিৎসকদের ওই সংগঠনের পক্ষে বিভাবসু তোষ এবং অলোক ঘোষ জানান, অসহায় শ্রমিকেরা নিজেরাই যে ভাবে নিজেদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য শিবিরের পরিকল্পনা করেন, তাতে তাঁদের সংগঠন সহায়তায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যায়।
উত্তরপাড়ার হিন্দুস্তান মোটরস কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক আশরফ খান, অরুণ গোস্বামী, ভিক্টোরিয়া জুটমিলের কাশীনাথ পাত্র, কোন্নগরের রিলাক্সন কারখানার নিমাই মুখোপাধ্যায়রা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বকেয়া না-পেয়ে অবসরপ্রকাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সমিতি আদালতের মাধ্যমে তাঁদের প্রাপ্য পাইয়ে দিয়েছে। তাই অরুণবাবু, কাশীনাথবাবুরা এ বার সমিতির পাশে দাঁড়াতে চান। স্বাস্থ্য শিবিরটি চালিয়ে যেতে চান তাঁরা। তাঁরাই যে শিবিরের মূল ভরসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy