প্রশিক্ষণ: ছাত্রদের সঙ্গে সব্যসাচী শীল। ছবি: সুশান্ত সরকার
পায়ের চোটে কাবু হয়ে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল তাঁর ক্রিকেট জীবন। বড় দলে খেলার আশা পূর্ণ হয়নি।
তাতে কী!
খেলোয়াড় হিসেবে না-হোক, কোচের ভূমিকায় নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন হুগলির ঘুটিয়াবাজারের বছর বাহান্নর সব্যসাচী শীল। কাঁধে তাঁর ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেট টিমের দায়িত্ব। চলতি মরসুমে তাঁর কোচিংয়ে ইতিমধ্যেই দ্বি-মুকুট জিতে ফেলেছে ওই ক্লাব।
বছর পনেরো সব্যসাচী ইস্টবেঙ্গলে কোচ প্রণব নন্দীর সহকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। কোচিংয়ের ‘এ’ লাইসেন্স পেয়েছেন। ২০১৫-’১৬ মরসুম থেকে ক্লাবে তিনিই প্রধান কোচ। চলতি মরসুমে সিএবি সিনিয়র ডিভিশন লিগ এবং জেসি মুখার্জি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় তাঁর কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দল। গত মরসুমে জিতেছিল এ এন ঘোষ ট্রফি। সিনিয়র লিগে হয়েছিল রানার্স।
তারকাবিহীন টিম নিয়ে এই সাফল্যে নজর কেড়েছেন সব্যসাচী। তিনি তারকা প্রথায় তেমন বিশ্বাসী নন। সাফ কথা, ‘‘ক্রিকেট টিম গেম। ধারাবাহিকতা রাখতে গেলে এগারো জনেরই ভূমিকা দরকার। মাঠ-মাঠের বাইরে একজোট থাকতে হবে।’’
কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় ক্লাবে কোচিং করানোর চাপ? সব্যসাচী জানিয়ে দেন, তিনি স্বাধীন ভাবেই দল পরিচালনা করেন। কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেন না।
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা একই রুটিন তাঁর। ট্রেন ধরে হাওড়া। সেখান থেকে ২৫৯ নম্বর বাসে সিএবি-র সামনে নেমে ক্লাবে প্রবেশ। চুঁচুড়া ইউনিয়ন অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং ত্রিবেণীর শিবপুর স্পোর্টিং ক্লাবেও দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। জেলায় অর্ণব নন্দী (ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক), পার্থসারথি ভট্টাচার্য, শচীন যাদব, অয়ন নন্দী, সৌম্য পাকড়েরা খেলেছেন কোচিংয়ে। ছাত্রদের অভিজ্ঞতা, ‘‘প্র্যাকটিসে কামাই নেই।’’
সব্যসাচী ভাল ব্যাট করতেন। জেলা স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। ময়দানের দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব ভিক্টোরিয়ায় দীর্ঘদিন খেলেছেন। ’৮৭ সালে পায়ে চোট পান। চোট সারিয়ে খেলা শুরু করলেও বছর পাঁচেক পরে ফের চোট। এর পরে ভিক্টোরিয়া এবং ইউনিয়ন ক্লাবে কোচ-কাম প্লেয়ার হয়ে ওঠেন। ২০০১-’০২ মরসুমে ভিক্টোরিয়া তাঁর কোচিংয়ে দ্বিতীয় ডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম ডিভিশনে ওঠে। সব্যসাচী জানান, ইউনিয়ন অ্যাথলেটিক থেকেই তাঁর উত্থান। নয়ের দশক পুলক বিশ্বাস তাঁকে নিজের দেশবন্ধু পার্কের কোচিং ক্যাম্পে নিয়ে যান। তাঁর তত্ত্বাবধানেই কোচিংয়ের হাতেখড়ি। কথোপকথনে অবধারিত ভাবে ‘ঘটি-বাঙাল’ প্রসঙ্গ উঠে আসে। রাখঢাক না করেই সব্যসাচী বলেন, ‘‘আমি ঘটি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। এখন তো এই ক্লাবের সদস্যও। ক্লাব আমার দ্বিতীয় বাড়ি। স্ত্রী নিতা অবশ্য খাঁটি বাঙাল।’’
ভবিষ্যতে বাংলার কোচ হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এখনই তা নিয়ে ভাবতে চান না সব্যসাচী। ছোট ছোট ধাপে এগোতে চান। আপাতত পরবর্তী লক্ষ্য ইস্টবেঙ্গলকে আটদলীয় সুপার লিগে চ্যাম্পিয়ন করে ত্রি-মুকুট জয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy