যোদ্ধা: গ্যারাজে কাজে ব্যস্ত পুষ্কর ঘোড়ুই। —নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতিতে কাজ গিয়েছে বাবার। উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের জোয়ারগড়ি পঞ্চায়েতের নয়াচকের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পুষ্কর ঘোড়ুই কী করে? অনলাইনে পড়াশোনার খরচ চালাতে মোটরবাইক সারানোর গ্যারাজে কাজ নিয়েছে সে।
খরচ বলতে ইন্টারনেটের। বাবা পঙ্কজবাবু কষ্ট করে ছেলের পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন কিনে দিয়েছেন। কিন্তু মাসে মাসে ইন্টারনেট খরচ দেবেন কী করে? কাজই তো নেই! মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখা পুষ্কর কিন্তু হাল ছাড়েনি। মাসে ৪০০ টাকা মজুরিতে যদুরবেড়িয়ার রথতলার একটি গ্যারাজে কাজে লেগে যায়।
যে কোনও দিন সকালে ওই গ্যারাজে গেলেই দেখা মেলে পুষ্করের। সকাল ৮টা নাগাদ স্কুলের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। ফোন নিয়ে আড়ালে বসে সে ক্লাস করে। বাইক সারাতে গিয়ে বহু মানুষই তার এই পড়াশোনা দেখেছেন। তাঁদের মধ্যে তনয় সিংহরায় বলেন, ‘‘ছেলেটাকে দেখে আশ্চর্য হলাম। গ্যারাজে বসে পড়াশোনাতেও কী মনোযোগ! ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক।’’
বাণীবন যদুরবেড়িয়া স্কুলের পরীক্ষার্থী পুষ্কর বলে, ‘‘মাধ্যমিকে ভাল ফল করতেই হবে। না হলে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না। বাবার কাজ নেই। সংসারে অভাব আছে। গৃহশিক্ষক নিতে গেলে অনেক টাকা লাগবে। সেই খরচ জোগাতে পারবে না বাবা। তাই নিজেই কাজ খুঁজে স্কুলের অনলাইন ক্লাসটাতেই মন দিয়েছি। গ্যারাজের টাকায় আমার ইন্টারনেট খরচটা উঠে যাচ্ছে।’’
পঙ্কজবাবু দর্জির কাজ করতেন। মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। লকডাউনে কাজ যায়। গ্রামে কাজ না-থাকায় ছেলে এবং স্ত্রী সবিতাকে নিয়ে কয়েক মাস আগে উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘর ভাড়া নিয়ে উঠে আসেন। এখনও তেমন কাজ পাননি। বাবার অসহায় অবস্থা দেখেই কাজ খুঁজে নেয় পুষ্কর। মোটরবাইক ধোওয়া, লিক সারানো, চাকায় হাওয়া দেওয়া— কত কাজ! পঙ্কজবাবু ছেলেকে মনে মনে আশীর্বাদ করেন। ছেলে যেন নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
পড়াশোনার প্রতি ছাত্রের এই অদম্য ইচ্ছা দেখে তার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বাণীবন যদুরবেড়িয়া স্কুলের শিক্ষক কাজি ইমদাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ। তাই অনলাইনে পড়াতে হচ্ছে। পুষ্কর ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করব। ওর সাফল্য কামনা করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy