নিহত সুকান্ত মজুমদার।
জেলা সদর চুঁচুড়ায় গুলিতে এক ঢালাই-মিস্ত্রি খুনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের এক যুবক খুন হলেন হুগলিতে।
মঙ্গলবার সকালে মগরার গজঘণ্টায় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন সুকান্ত মজুমদার (৩২) ওরফে সুকান। গাড়ি করে এসে ত্রিবেণীর কালীতলার বাসিন্দা ওই যুবককে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি জমি-বাড়ি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরেই তাঁকে খুন করা হয় বলে পুলিশের অনুমান। এই নিয়ে গত তিন দিনে হুগলির শহরাঞ্চলে তিন যুবক খুন হলেন।
মঙ্গলবারের ঘটনায় নিহতের মা তুলসীদেবী থানায় অভিযোগে জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী দেবরাজ পালের সঙ্গে তাঁর ছেলের বিরোধ চলছিল। তার জেরেই ছেলেকে খুন করা হয়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত পলাতক। তল্লাশি চলছে। সুকান্তের বিরুদ্ধেও অসামাজিক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিছু দিন হাজতবাসের পরে মাস কয়েক আগে তিনি জামিন পান। সেই সংক্রান্ত কোনও গোলমালে তাঁকে খুন করা হল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি নিয়ে গত বছর দুর্গাপুজোর সময় থেকেই সুকান্তের সঙ্গে দেবরাজের বিবাদ চলছিল। সেই বিবাদের জেরে সম্প্রতি সুকান্তের বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। ইদানীং ব্যবসার কাজে মগরা ছেড়ে দুর্গাপুরে থাকছিলেন সুকান্ত। গত সপ্তাহে বাড়ি ফেরেন।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ির অদূরে গজঘণ্টায় একটি চায়ের দোকানে দু’তিন জনের সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন সুকান্ত। সেই সময়ে বাঁশবেড়িয়ার দিক থেকে একটি বড় গাড়িতে কয়েক জন দুষ্কৃতী আসে। দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে তিন জন হেঁটে এসে সুকান্তকে লক্ষ করে গুলি চালায়। সুকান্তের শরীরে অন্তত ১২টি গুলি লাগে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরে দুষ্কৃতীরা গাড়িতে উঠে চম্পট দেয়। সুকান্তকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার জেরে আতঙ্কে বন্ধ হয়ে যায় এলাকার দোকানপাট। ঘটনাস্থলে বিশাল বাহিনী নিয়ে যান মগরা থানার ওসি সুখময় চক্রবর্তী এবং ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল। সুকান্তের খুন হওয়ার কথা জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে আসেন সুকান্তের মা-বাবাও। সেখান থেকে সাত-আটটি গুলির খোল উদ্ধার করে পুলিশের হাতে দেন সুকান্তের মা। সুকান্তের বাবা গোপালবাবু বলেন, “সকালে আমি ঘুমোচ্ছিলাম। ও কখন বেরিয়ে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। দেবরাজের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার পর থেকেই ও আতঙ্কে ছিল।”
যে চায়ের দোকানে এ দিন সুকান্তকে খুন করা হয়, সেই দোকানের মালিক মনোরঞ্জন অধিকারী বলেন, “সুকান্ত-সহ দু’তিন জন দোকানে বসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমি বাজারের দিকে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে শুনি ওই কাণ্ড।মুখ থুবড়ে পড়েছিল সুকান্তের দেহটা।”
রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকেগ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকী, সোমবার রাতে চুঁচুড়ার সুজনবাগান এলাকায় ঢালাই-মিস্ত্রি বিষ্ণু মজুমদারের খুনের ঘটনাতেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। তদন্তকারীদের অনুমান, নৈহাটি-কাঁকিনাড়া থেকে দুষ্কৃতীরা গঙ্গা পেরিয়ে এসে খুন করে ফিরে গিয়েছে। শ্রীরামপুরে নেহরুনগর কলোনির গৌতম ধরকে খুনের ঘটনায় ধৃত রাজু আঢ্যিকে অবশ্য এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ৮ দিন পুলিশ হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃত জানায়, এক দুষ্কৃতী তার আত্মীয়। তার কাছ থেকেই সে আগ্নেয়াস্ত্র পায়। ইচ্ছাকৃতভাবে সে গৌতমকে মারেনি। আগ্নেয়াস্ত্রটি পরীক্ষা করতে গিয়েই গুলি বেরিয়ে গৌতমের শরীরে লাগে। তবে, রাজুর এই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy