Advertisement
০৫ মে ২০২৪

থানায় কাজ জমছে, সিঙ্গুর দেখাচ্ছে পুলিশ

এমনিতে থানা-পুলিশ এড়িয়েই চলতে চান বলাগড়ের চরকৃষ্ণবাটির নীলকান্ত সাহা। কিন্তু পারিবারিক সমস্যায় তাঁকে সম্প্রতি থানায় যেতে হয়। এখন নিজেই অনুতাপ করছেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
হুগলি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

এমনিতে থানা-পুলিশ এড়িয়েই চলতে চান বলাগড়ের চরকৃষ্ণবাটির নীলকান্ত সাহা। কিন্তু পারিবারিক সমস্যায় তাঁকে সম্প্রতি থানায় যেতে হয়। এখন নিজেই অনুতাপ করছেন।

কেন?

ছাপোষা মানুষটি বলেন, ‘‘থানায় গিয়ে নিয়মমাফিক সব কিছুই করলাম। এখন গেলেই শুনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অফিসার সিঙ্গুরে ‘ডিউটি’তে আছেন। এই ক’দিনে কতবার যে থানায় গিয়েছি!’’

বলাগড়ের নীলকান্তবাবুর মতোই সমস্যায় পড়ছেন হুগলির বিভিন্ন থানা এলাকার বহু বাসিন্দাই। তাঁদের অভিযোগ, ‘সিঙ্গুর-ডিউটি’র কথা বলে থানাগুলি কাজে গড়িমসি করছে। জেলা পুলিশের কর্তারা অভিযোগ মানেনি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিঙ্গুরে টাটাদের অধিগৃহীত জমি চাষিদের ফেরাতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। তাই সেখানকার নিরাপত্তায় রোজই বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। তার উপরে রয়েছে সিঙ্গুরে ভিআইপি-দের আনাগোনার জন্য পুলিশি বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তার জন্য থানাগুলির দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মানছেন না জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, কিছু ক্ষেত্রে সিঙ্গুরকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিঙ্গুরের জন্য কিছুটা বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না, এটা ঠিক নয়। কোনও থানা থেকে যদি সিঙ্গুরের অজুহাত দেওয়া হয়, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

একে উৎসবের মরসুম। উৎসবের দিনগুলিতে সব এলাকাতেই বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তার সঙ্গে প্রতিদিনের চুরি-ডাকাতি-খুন-ছিনতাইয়ের মতো আইনশৃঙ্খলার সমস্যাও সামলাতে হয়। কিন্তু সিঙ্গুরে রোজই পুলিশ পাঠাতে হচ্ছে বলে এ বার বেশি সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে উৎসবের দিনগুলি সামলাতে হচ্ছে বলে দাবি জেলা পুলিশের একাংশের। তাদের মতে, যে ভাবে থানা থেকে পুলিশ চেয়ে পাঠানো হচ্ছে তাতে কাজ হবে কী করে! কাজ তো জমবেই।

জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, হুগলির বেশির ভাগ থানা থেকে ১-২ জন অফিসার (এসআই বা এএসআই) এবং চার-পাঁচজন কনস্টেবলকে রোজ সিঙ্গুর যেতে হচ্ছে। থানার কাজ চালানোর জন্য বড়জোড় জনাদশেক কনস্টেবল পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের দিয়েই পর্যায়ক্রমে কাজ করাতে হচ্ছে। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যাচ্ছে না।

মগরার নতুনগঞ্জের একটি সোনার দোকান‌ের মালিক বলেন, ‘‘আমার দোকা‌নে চুরি হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দিন কুড়ি আগে দেখা করতে গিয়েছি‌লাম। শুনলাম, ওই অফিসারের ‘সিঙ্গুর-ডিউটি’ চলছে। পরে আসতে বলা হয়।’’

খন্যানের মারসিটের এক ব্যক্তির বাড়িতে দেড় মাস আগে চুরি হয়। এক সপ্তাহ আগে তিনি সে ব্যাপারে পান্ডুয়া থানায় যান। তিনিও সংশ্লিষ্ট অফিসারের ‘সিঙ্গুর ডিউটি’র কারণে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Police station Singur-duty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE