Advertisement
১১ মে ২০২৪

লক্ষণ বদলাচ্ছে ডেঙ্গি, নজর রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা

জ্বর, দুর্বলতা, বমিভাব এমনই উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন বছর ছাব্বিশের সৌম্যজিৎ দাস। কয়েক বার পাতলা পায়খানাও হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে ডায়েরিয়ার লক্ষণ মনে হলেও রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। প্যারাসিটাম‌ল, বমি বন্ধের ট্যাবলেটের পাশাপাশি ওআরএস দেওয়া হল।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

জ্বর, দুর্বলতা, বমিভাব এমনই উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন বছর ছাব্বিশের সৌম্যজিৎ দাস। কয়েক বার পাতলা পায়খানাও হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে ডায়েরিয়ার লক্ষণ মনে হলেও রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। প্যারাসিটাম‌ল, বমি বন্ধের ট্যাবলেটের পাশাপাশি ওআরএস দেওয়া হল। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল, রক্তে অনুচক্রিকার (প্লেটলেট) পরিমাণ কমেছে অনেকটাই। চিকিৎসক জানালেন ডেঙ্গি। হাসপাতালে গিয়ে কয়েক বোতল স্যালাইন দেওয়ার পরে সুস্থ হলেন রোগী।

গৃহবধূ দীপ্তি চৌধুরীর অল্প জ্বরের সঙ্গে গায়ে ব্যথা, বমি ভাব এবং খাবারে অরুচি ছিল। চিকিৎসক ভেবেছিলেন ভাইরাস ঘটিত জ্বর। তার সঙ্গে জণ্ডিসের প্রারম্ভিক লক্ষণ। যদিও রক্তের নমুনা পরীক্ষার পরে পাওয়া গেল ডেঙ্গির জীবাণু।

দীপালি সাহা নামে এক মহি‌লার অল্প জ্বর হয়েছিল। দুর্বলতা ছিল, বমিভাব ছিল। মাথা ঘুরছিল। শৌচাগারে মাথা ঘুরে পড়েও যান। রক্ত পরীক্ষায় ধার পড়ল ডেঙ্গি। আবার বিলিরুবিন বেড়ে গিয়েছিল অনেকটা। জ্বর-সর্দি হওয়ায় এক কিশোরীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছিলেন মা। উপসর্গ দেখে চিকিৎসকের মনে হয়েছিল ভাইরাস-ঘটিত জ্বর। প্যারাসিটামল দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিন-চার দি‌নেও জ্বর না কমায় দেখে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। দেখা গেল, ভাইরাল নয়, আসলে তার ডেঙ্গি হয়েছে।

উপরের ঘটনাগুলি হুগলির শ্রীরামপুরের। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এই সব নমুনায় প্রমাণ হচ্ছে যে ক্রমশ উপসর্গ বদলাচ্ছে ডেঙ্গির। গত তিন সপ্তাহ ধরে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ডেঙ্গির লক্ষণ বলতে সাধারণত তীব্র জ্বর, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীরে র‍্যাশ দেখা দেয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণ বদলাচ্ছে ডেঙ্গি। এ সব উপসর্গ না দেখে অনেক চিকিৎসক ভাইরাস জ্বর মনে করছেন। কিন্তু পরে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের মতে ভাইরাসের গঠনগত পরিবর্তনের জন্যই এমনটা হচ্ছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে আতান্তরে পড়তে হচ্ছে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কারও ক্ষেত্রে শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে, সেরিব্রাল অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। যদিও পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এটা আসলে ডেঙ্গির প্রভাব।

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন কর্তা অমিয়কুমার হাটি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি হলে ডায়েরিয়া হতে পারে। এমনও হতে পারে যে শরীরে ডেঙ্গির ভাইরাস আছে, অথচ তার কোনও উপসর্গ নেই। এটাকে আমরা বলি ‘ইন অ্যাপারেন্ট ইনফেকশন’। তাই জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।’’ তিনি আরও জানান, ডেঙ্গি হলে তবে মশা নিধনে নামব, এই মনোভাব বদলাতে হবে। মশা নিধন প্রক্রিয়া সারা বছর ধরেই চালানো উচিত।

চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গির ভাইরাস ক্রমশ চরিত্র বদল করাতেই রোগের লক্ষণ বদলাচ্ছে। ভাইরাল-জ্বর, ডায়েরিয়া বা জণ্ডিসের উপসর্গ নিয়ে অনেকে আসছেন। পরে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গি হয়েছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।’’ এই অবস্থায় জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ খাওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।

শ্রমজীবী হাসপাতালের চিকিৎসক কুনাল দত্তের বক্তব্য, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাল-ফিভার বলে হলেও ৩-৪ দিন পরেও জ্বর সারছে না। রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গি। সাধারণ জ্বর হলেও অনেক ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।’’

ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে কড়া হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে শ্রীরামপুরে। মশার উপদ্রব কমাতে বিভিন্ন স্থানে জল জমা আটকাতে সচেষ্ট হয়েছে পুরসভা। মঙ্গলবার শহরের কয়েকটি জায়গা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Hospital Check-up vactine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE