হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
বহু দিন ধরে আটকে রয়েছেন হাসপাতালে। ছুটি মিলছে না। বন্দি দশা কাটাতে তাই হাসপাতালের পাঁচতলার শৌচাগারের দেওয়ালে গর্ত করে পালাতে চেষ্টা করলেন দুই রোগী। শুক্রবার এই ঘটনা ঘিরে গোলমাল বাঁধে হাওড়া জেলা হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন দু’জন। কিন্তু এই ঘটনায় হাসপাতালে নজরদারির ঢিলেঢালা ছবিটা ফের বেআব্রু হয়ে পড়ল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সকালে পাঁচতলায় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বছর আঠাশের শ্রীকান্ত এবং বছর পঞ্চাশের অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি শৌচাগারের দেওয়াল ভেঙে আড়াই ফুটের একটি গর্ত তৈরি করেন। গর্তের পাশেই ছিল জলের পাইপলাইন ঠিক করার জন্য তৈরি বাঁশের মাচা। পুলিশ জানায়, দুই রোগী ওই বাঁশ বেয়ে নীচে নেমে এসে পালানোর চেষ্টা করেন।
হাওড়া হাসপাতালের পিছনের দিকেই রয়েছে হাওড়া আদালত চত্বর। সকালে আদালতে আসা সাধারণ মানুষ ও আইনজীবীরা দেখেন হাসপাতালের পাঁচতলায় দেওয়ালের গর্ত দিয়ে নেমে আসছেন দু’জন। দেখে অনেকেই ভাবেন চিকিৎসাধীন কোনও আসামী পালাচ্ছে। সকলে চিৎকার শুরু করেন। ছুটে আসেন হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা। তাঁরাই ধরে ওয়ার্ডে নিয়ে যান ওই দু’জনকে।
বাইরের লোকেরা দেখে না জানালে কি পালিয়েই যেতেন ওই দুই রোগী? হাসপাতালের নজরদারি তবে কোথায়? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবারই, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সকলের চোখের সামনে দিয়েই উধাও হয়ে গিয়েছেন এক মানসিক রোগী। তাঁকে খুঁজে আনা তো দূর, তার উপরে নজর রাখার দায় নিতেও অস্বীকার করা হয়েছে হাসপাতালের তরফে। এমনই অভিযোগ ওই রোগীর পরিজনেদের। তার মধ্যেই এমন ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই সরব হয়েছেন অনেকে।
কিন্তু কেন এ ভাবে পালানোর চেষ্টা করলেন ওই রোগীরা?
হাওড়া জেলা হাসপাতালের ব্যাখ্যা, কখনও পুলিশ কখনও বা সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনায় আহত হওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন বা ভবঘুরেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার পরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের আর কেউ খোঁজ রাখেন না। ফলে চিকিৎসা ও পরিষেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা ছুটি পান না। কারণ, প্রথমত তাঁরা ঠিক মতো ঠিকানা বলতে পারেন না। আর দ্বিতীয়ত, ঠিকানা বলতে পারলেও পুলিশ তা খুঁজে বাড়ির লোকজনকে খবর দেয় না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ফিরিয়ে নিতে চান না পরিজনেরা। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘ঠিক ঠিকানা বললেও এই ধরনের রোগীকে বাড়ির লোক নিয়ে না গেলে হাসপাতাল একা ছাড়তে পারে না। যদি দুর্ঘটনা ঘটে তা হলে তার দায় কে নেবে? তাই আমরা ছুটি দিই না।’’ আর দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটিয়ে ছুটি না পেয়ে কখনও কিছু রোগী পালানোর চেষ্টা করেন।
হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তার জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে। খুব শীঘ্রই প্রাক্তন সেনা কর্মী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে কয়েক জনকে রাজ্য সরকার হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিয়োগ করবে বলে শুনছি। তাঁরাই ওয়ার্ডে পাহারায় থাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy