আলোচনা: বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
একদিকে নদীর জলের উপর নির্ভরশীল আলু ও বোরো ধানের চাষ। অন্য দিকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের চুক্তি অনুযায়ী মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে পলি তোলার কাজ শুরু হবে ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়াতেই। সে ক্ষেত্রে যেমন নদীতে জল রাখা যাবে না, তেমনই এক ফসলি এলাকার চাষের জন্য জল না থাকলে চাষিদের ক্ষোভও দানা বাঁধবে। এই সমস্যা সমাধানেই বৃহস্পতিবার বিকেলে খানাকুল-১ ব্লকের প্রেক্ষাগৃহে বৈঠক করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
বৈঠক শেষে শুভেন্দু বলেন, “অনেক লড়াই করার পরে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থে ফেব্রয়ারির ৭ তারিখ থেকে কাজ শুরু হবে। এই কাজের জন্য এ বার বোরো চাষের জন্য মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে জল পেতে অসুবিধা হবে। খানাকুলের দুটি ব্লকের জন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। যেমন জেলা পরিষদ সেচের বিকল্প ব্যবস্থা করবে। তার প্রয়োজনীয় অর্থ সেচ ও জলপথ দফতর দেবে। এছাড়া জলসম্পদ অনুসন্ধান বা ক্ষুদ্র সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অচল পাম্পগুলোকে সচল করার জন্য। এছাড়া প্রয়োজনে আরও বেশ কিছু পাম্প সেট বসানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”
চাষিদের কাছে মন্ত্রীর বার্তা, “চাষের কাজে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একটু সমস্যা হতে পারে। তবে পরে এর থেকে চাষিরাই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। বন্যা থেকেও রেহাই মিলবে।”
সমস্ত বিষয়টি নিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে চাষিদের বিলি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রকল্প হলে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা-সহ হুগলির আরামবাগ মহকুমাও বন্যা থাকবে রেহাই পাবে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজটা চলবে।’’ তিনি জানান, রাজ্যে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি অনুমোদন মিলেছে। এই আর্থিক বছরে ৬৫০ কোটি টাকার কাজ হুগলি জেলায় হচ্ছে। প্রশাসনিক বৈঠকের পর এ দিন দিঘা যাওযার পর মৃত দলের চার নেতার পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকা র চেক তুলে দেন।
আরামবাগ মহকুমার ছটি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৩টি পঞ্চায়েতই বন্যা কবলিত বলে চিহ্নিত। জেলা সেচ দফতর সূত্রে খবর, মহকুমার অন্য এলাকার চেয়ে খানাকুলের দুটি ব্লকের ভৌগোলিক অবস্থান আরও ১০ ফুট নিচে। কড়াইয়ের আকারের এই ২৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় আছে ২৪টি পঞ্চায়েতের ১৪৭টি মৌজা। বন্যার জন্য এখানে আমন ধানের চাষ হয় না। আর আলু এবং বোরো ধান চাষের জন্য নদীর জলের উপরে নির্ভরশীল। নদীর জল ধরে রাখতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত কিংবা জেলা পরিষদ থেকে নদী গর্ভে অস্থায়ী মাটির বাঁধ তৈরি করে দেয়। সেই বাঁধকে স্থানীয়ভাবে ‘বোরো বাঁধ’ বলা হয়। সেই বোরো বাঁধে আটকে থাকা জলই এই এলাকায় সেচের একমাত্র ভরসা।
এমন পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদ বিকল্প সেচের ব্যবস্থা কী করছে?
জেলা সেচ দফতর থেকে বলা হয়েছে, ফেব্রয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বর্ধমান সীমান্তে দামোদর যেখানে মুণ্ডেশ্বরীতে ভাগ হয়েছে সেই বেগুয়া পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে মুখ বন্ধ হবে মুণ্ডেশ্বরীর। বলা হয়েছে ডিসেম্বরের ৬ তারিখ পর্যন্ত পর্যাপ্ত জল নদী এবং মাঠে জল ঢুকয়ে নিতে বলা হয়েছে। এরপরেও মুণ্ডেশ্বরীর কিছু জল যদি খানাকুলে আনা যায় তার জন্য পুরশুড়ার আকবরি খাল হয়ে শ্রীরামপুর খালে সেই জল ফেলা হবে। তারপর চিংড়া তেলিদহ স্লুইশ গেট বন্ধ করে সংলগ্ন জেলা পরিষদের তৈরি বোরো বাঁধে জমানো হবে। সেই জলই বালিগোড়ি থেকে পানঝাড়া খাল দিয়ে রাজহাটি-১, খানাকুল-১, ধান্যগড়ি, জগৎপুর, রাজহাটি-২ অঞ্চলে জল পৌঁছবে। আবার স্লুইস গেট খুলে খানাকুলের আরও কিছু অঞ্চল পলাশপাই-১ ও ২, নতিবপুর-১ ও ২ ইত্যাদি কি অঞ্চলে এবং হাওড়ার আমতা-সহ কিছু গ্রামীণ এলাকায় জল পাঠানো হবে।
চাষিদের প্রয়োজনীয় জলের বড় জোর ৬০ শতাংশ যোগান দেওয়া যাবে বলে মনে করছে জেলা পরিষদ। বাকি সরকারি বিভিন্ন সেচ এবং ব্যক্তিগত সেচই ভরসা। খানাকুলের দুটি ব্লকের চাষিদের অবশ্য দাবি ছিল, অন্তত আগামী মার্চ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত যদি নদীর জল দেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy