জুলাই মাস পর্যন্ত তারকেশ্বর পুরসভার বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে ৫২ লক্ষ। এমনই অভিযোগ করেছেন ওই পুরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর। পরিস্থিতি এমন যে, রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা যেকোনও সময়ে ওই পুরসভার বিদ্যুতের লাইন কেটে দিতে পারে বলে আশঙ্কা।
পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত অবশ্য এ বার বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকার বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তৃণমূলের এক মহিলা কাউন্সিলর জানান, পুরপ্রধান বৈঠকে দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ দফতর ভুল করে বিল পাঠিয়েছে। স্বপনবাবু নিজে দাবি করেছেন, ‘‘বিল বকেয়া নেই। ওসব তো রাজ্য সরকারই দেয়।’’ যদিও পুরসভারই এক কাউন্সিলরের পাল্টা দাবি, ‘‘পুরপ্রধান অসত্য বলছেন। পুরসভার ৫২ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে। পুরকর্মীরা ঠিকমতো পেনশনও পাচ্ছেন না।’’
তারকেশ্বর পুর এলাকায় পথবাতি, জলের পাম্প চালানো, অফিসের আলো, পাখা, কম্পিউটার-সহ অন্যান্য বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম চালাতেই মূলত পুরসভার বিদ্যুৎ খরচ হয়। তারকেশ্বর পুরসভায় বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকার অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। বছর দুই আগেও কমবেশি ৩০ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি ছিল এখানে। সে বার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল।
শুধু বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকা নয়, তারকেশ্বর পুরসভার পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে তিতিবিরক্ত এবং পুর কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের একাংশ। কয়েকজন পুর কর্মচারীদের অভিযোগ, তাঁরা সময়ে বেতন পান না। পিএফ, গ্র্যাচুইটির টাকাও সময়ে জমা দেওয়া হয় না। টাকা না থাকায় পুরসভার উন্নয়ন তহবিল থেকে কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিতে হচ্ছে। ফলে এলাকা উন্নয়নের কাজ প্রায় বন্ধ। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার ক্ষোভ, ‘‘বহু টাকা বিদুতের বিল বাকি। অথচ পুরসভার কারও মাথাব্যাথা নেই। এই পুরসভায় উন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু করবে কে?’’
এই পরিস্থিতির মধ্যেই সম্প্রতি ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে একটি বড়ো গাড়ি কিনেছে পুরসভা। সেই নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশই ক্ষুব্ধ। পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের প্রশ্ন, ‘‘টাকার অভাবে তারকেশ্বরের উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। ওই গাড়ির টাকা কে শোধ করবে কেউ জানেন না!’’ ওই কাউন্সিলরের আরও অভিযোগ, পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ভুয়ো বিল দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। রাজ্য সরকার অডিট করালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তারকেশ্বর শৈব্য তীর্থ। সারা বছর লক্ষ লক্ষ পূর্ণ্যার্থী এখানে আসেন। পর্যটনকেন্দ্র ঢেলে সাজতে তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ (টি়ডিএ) তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। টিডিএ-কে সরকার এলাকা উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন অবস্থাতেও পুরসভা বিদ্যুতের বিল মেটাতে পারছে না। নিজস্ব তহবিলের ভাঁড়ার প্রায় শূন্যে
এসে ঠেকেছে।
বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও সংস্থার বেশি টাকা বকেয়া হয়ে গেলে আমরা তাদের আবেদনক্রমে কিস্তিতে টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমরা এ ক্ষেত্রে আমরা তারকেশ্বর পুরসভা থেকে সেরকম কোনও আবেদন পাইনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy