ফের ধস চন্দননগরে।
নিকাশি নালা (গড়) সংস্কার করতে গিয়ে ধস নামায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। ফাটল ধরেছে পাশের একটি আবাসনেরও। বৃহস্পতিবার এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে চন্দননগরের উর্দিবাজার এলাকায়। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৩ সালের ১ জুলাই চন্দননগর জোড়াঘাটের কাছে রাস্তায় প্রায় ৮ ফুট গভীর ধস নামে। ওই ঘটনার ঠিক একদিন পরে ৩ জুলাই হাটখোলা অঞ্চলে গঙ্গার পাড় ঘেঁষে ধসের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দু’টি আবাসন এবং একটি বাড়ি। বার বার ধস নামায় চিন্তিত পুরসভাও।
পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিন সকালে প্রবল বৃষ্টির পর উর্দিবাজার এলাকার বাসিন্দা দেবকুমার শীলের বাড়ির কিছুটা অংশ নালায় ধসে যায়। বাড়ির দেওয়ালেও বিশাল ফাটল দেখা দেয়। গঙ্গার ১০০ মিটারের মধ্যে ধস নামায় আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন লোকজন। পাশের একটি আবাসনের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। শহরজুড়ে মাটির তলা দিয়ে যাওয়া ফরাসি আমলে তৈরি জল নিকাশি নালাগুলির গঙ্গার সঙ্গো যোগ রয়েছে। শহরে বর্জ্য পদার্থ এবং জল এই সব নালা দিয়েই গঙ্গায় পড়ে। বহু পুরনো হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে নিকাশি নালাগুলির হাল ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। ফলে বর্ষার সময় নীচের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় ধস নামছে। এতে গঙ্গার পাড় ঘেঁষে থাকা বাড়িগুলিও ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের মত।
২০১৩ সালে ৩ জুলাই হাটখোলায় গঙ্গার পাড় ধসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছিল দুটি আবাসন এবং একটি বাড়ির। আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান আবাসিকরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, গঙ্গার অপর পাড়ে যে ভাবে মেশিনের সাহায্যে গঙ্গা থেকে বালি তোলা হচ্ছিল তার ফলেই এ পারে ধস নামে। কী কারণে ধস, তা জানার জন্য নদী বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা তদন্তে নামেন। দেখা যায়, আবাসনগুলির ভিতের মাটি গঙ্গায় ধুয়ে যায়। তর ফলেই ধস নামে। সেই সময় বালির বস্তা দিয়ে সেই ভাঙন বা ধস আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি পূর্ত দফতর এবং সেচ দফতরের যৌথ উদ্যোগে লোহার তারের জালির মধ্যে ইট বোঝাই করে গঙ্গার পাড় বরাবর ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা হয়েছিল। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নীজে সরেজমিন তদন্তে এসেছিলেন। সেই সময় গঙ্গা থেকে বালি তোলা বন্ধের নির্দেশও দেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের তা শুরু হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা দীপ সাউ বলেন, ‘‘নিকাশি নালাটি দীর্ঘদিন পর সংস্কারের কাজ হচ্ছিল। এদিন সকালে বৃষ্টির পর হঠাৎই হুড়মুড় করে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি পাশের বাড়ির একাংশ ধসে গিয়েছে। আমাদের আবাসনের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়।’’
পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বর্ষার আগে ওই গড় সংস্কার শুরু হয়েছিল। সারা শহরের জল ওই গড় দিয়ে বের হচ্ছে। তাই সেটি নতুন করে বাঁধানোর কাজ চলছিল। তবে বাড়িটি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় একটা অংশ ধসে যায়। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার এবং কেএমডিএর বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল দেখে গিয়েছেন।’’ পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার শৈবাল রায় বলেন,‘‘ বাড়িটা পুরনো হওয়ার জন্যই প্রবল বর্ষণে ভেঙে পড়েছে। তবে যাতে আর কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
কেএমডিএর বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ ঘোষালের কথায়, ‘‘মাটির নীচের নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ার কারণে বর্ষায় নীচের মাটি নরম হয়ে ধসের আকার নেয়। চন্দননগর শহরজুড়ে বহু প্রাচীন বাড়ি রয়েছে। সংস্কার না করার জন্য বর্ষায় ভাঙার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy