Advertisement
০২ মে ২০২৪
সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা

ক্রেশ বাঁচাতে এলেন মায়েরা

কেউ জরির কাজ করেন, কেউ মাঠে ধান কাটতে যান, কেউ দরজির কাজ করেন। উপার্জন সামান্যই। তবু তা থেকে বাঁচিয়েই মায়েরা মাসে ১০০ টাকা করে দিয়ে ক্রেশটি বাঁচাতে চাইছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ক্রেশ বন্ধ হলে বাচ্চাদের রাখব কোথায়? কাজ করব কী করে?

পাঠ: কামিনার সেই ক্রেশে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র।

পাঠ: কামিনার সেই ক্রেশে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি অনুদান। তাতে কী! স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত উলুবেড়িয়ার কামিনা গ্রামের একটি ‘ক্রেশ’ (যেখানে শিশুদের আগলানো হয়) চালু রাখতে এগিয়ে এলেন মায়েরাই!

কেউ জরির কাজ করেন, কেউ মাঠে ধান কাটতে যান, কেউ দরজির কাজ করেন। উপার্জন সামান্যই। তবু তা থেকে বাঁচিয়েই মায়েরা মাসে ১০০ টাকা করে দিয়ে ক্রেশটি বাঁচাতে চাইছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ক্রেশ বন্ধ হলে বাচ্চাদের রাখব কোথায়? কাজ করব কী করে?

কেন্দ্র সরকার ২০০৭ সালে ‘রাজীব গাঁধী জাতীয় ক্রেশ’ প্রকল্পের আওতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় এই জাতীয় ক্রেশ চালু করে। কর্মরত মায়েরা ছ’বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ওই ক্রেশে রেখে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। কাজ শেষ হয়ে গেলে মায়েরা সন্তানদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। এক-একটি ক্রেশে ২৫টি করে বাচ্চা রাখার কথা বলা হয়। সেখানে শিশুদের পড়াশোনা ছাড়াও তিনবেলা খাবার ও চিকিৎসার সুযোগ মিলছিল। মিলছিল নিরাপত্তাও। এ জন্য কেন্দ্র বছরে ৪২ হাজার টাকা করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে দিচ্ছিল। গত বছরের গোড়া থেকে ক্রেশপ্রতি ওই বরাদ্দ বাড়িয়ে বছরে ১ লক্ষ টাকা করা হয়।

কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্র রাজ্যের ৭৭১টির মধ্যে ৪৮৯টি ক্রেশের আর্থিক অনুমোদন বাতিল করে দিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সেই তালিকায় কামিনার ওই ক্রেশটি ছাড়াও জেলার আরও চার-পাঁচটি ক্রেশ রয়েছে। আর্থিক অনুমোদন বাতিল হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই জেলার ওই চার-পাঁচটি ক্রেশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কামিনার ক্রেশটির ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা। সংস্থাটির কর্ণধার মন্টু শী বলেন, ‘‘আমরা এক বছর ধরে কেন্দ্রের অনুদান পাচ্ছিলাম না। রাজ্য সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় বকেয়া টাকা কবে মিলবে ঠিক নেই। নতুন করে আর টাকা দেওয়া হবে না। কেন্দ্র আমাদের মতো অনেক ক্রেশের আর্থিক অনুমোদন বাতিল করেছে।’’ রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তাও জানান, জুন মাসের শেষ দিকে টাকার বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সমস্যার কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন কামিনার ক্রেশের শিশুদের মায়েরাই। তাঁরাই টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ক্রেশ চালু রাখতে অনুরোধ করেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিকে। মায়েদের মধ্যে মোসলেমা বেগম বলেন, ‘‘আমি দরজির কাজ করি। এখানে বাচ্চাকে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করি। ক্রেশ বন্ধ হলে বাচ্চাকে কোথায় রাখব? নিজেরাই টাকা দেব।’’ একই আশ্বাস শোনা গিয়েছে পেশায় জরির কারিগর টুকু ঘুঘু, সুপর্ণা মণ্ডলের মুখেও।

এমনিতে ক্রেশটি দুপুরে চলে। গরম পড়ে যাওয়ায় বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে। ৩২টি শিশু আসে। আপাতত ক্রেশ বন্ধ না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘যে টাকা অভিভাবকেরা দিতে চাইছেন, তা খুব বেশি নয়। তবু চেষ্টা করছি ক্রেশ চালু রাখার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE