Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কর্মী সঙ্কট, শতবর্ষ প্রাচীন গ্রন্থাগার ধুঁকছে গুপ্তিপাড়ায়

স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই। সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদও শূন্য। তাই শতবর্ষ পেরনো গুপ্তিপাড়ার শিশির বাণীমন্দির পাঠাগার সপ্তাহে এক দিনের বেশি খুলছে না।

ঐতিহ্য: গুপ্তিপাড়ার শিশির বাণীমন্দির পাঠাগার। ছবি: সুশান্ত সরকার

ঐতিহ্য: গুপ্তিপাড়ার শিশির বাণীমন্দির পাঠাগার। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রকাশ পাল
গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৬
Share: Save:

স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই। সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদও শূন্য। তাই শতবর্ষ পেরনো গুপ্তিপাড়ার শিশির বাণীমন্দির পাঠাগার সপ্তাহে এক দিনের বেশি খুলছে না। হতাশ পাঠকেরা।

বছরের পর বছর এ তল্লাটের বহু মানুষ এই পাঠাগারে ভিড় জমিয়েছেন। প্রায় ১১ হাজার বই রয়েছে। তার মধ্যে দুষ্প্রাপ্য বই ছাডাও স্বাধীনতার আমল থেকে বিভিন্ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের খবরের কাগজ সংরক্ষিত রয়েছে। স্মার্টফোনের বাড়বাড়ন্তের যুগেও এক শ্রেণির মানুষ গ্রন্থাগারে এসে বই পড়ার অভ্যাস বদলাননি। কিন্তু তাঁদের অনুযোগ, গ্রন্থাগারই তাঁদের থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে!

মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবার বাদে প্রতিদিনই বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকত। শেষ স্থায়ী সময়ের গ্রন্থাগারিক ছিলেন গণেশকুমার গুপ্ত। বছর কয়েক আগে তিনি অবসর নেন। তখন থেকে সহকারী গ্রন্থাগারিক অশ্বিনীকুমার জড় ওই পাঠাগার পরিচালনা করছিলেন। তিনি অবসর নেন ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। তাঁর জায়গায় কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। তবে, খামারগাছির মুক্তকেশী লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক অসীম হালদারকে এই পাঠাগারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে আসেন। অর্থাৎ, সপ্তাহে এই এক দিনই গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে। গ্রন্থাগারের হাল নিয়ে অসীমবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বৃহস্পতিবার গ্রন্থাগার খুললে অশ্বিনীবাবু আসেন। পাঠকদের সাহায্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘একে তো মাত্র এক দিন খোলা। অস্থায়ী যিনি আছেন, তিনি কোনও কারণে নির্দিষ্ট দিনে ছুটি নিলে সেই সপ্তাহে গ্রন্থাগার বন্ধই থাকবে। এ ভাবে চলে?’’ এই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী বিশ্বনাথ মণ্ডলও। তিনি জানান, ১৯১৭ সালে এই পাঠাগার তৈরি হয়। তখন এর নাম ছিল গুপ্তিপাড়া পাবলিক লাইব্রেরি। পরে স্বাধীনতা সংগ্রামী শিশিরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে এই পাঠাগারের নামকরণ হয়। ১৯৮০ সালে এটি সরকারপোষিত গ্রন্থাগার হয়। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘সরকার গ্রন্থাগারটি হাতে নেওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। এই পরিস্থিতি হবে, ভাবিনি।’’ সুজিৎ মুখোপাধ্যায় নামে আর এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘গুপ্তিপাড়ার সংস্কৃতি-চর্চার অন্যতম এই পাঠাগার সবসময় গমগম করত। এখন সারাক্ষণ তালাবন্ধ থাকে। দেখলে কষ্ট হয়।’’

স্থানীয় বাসিন্দা রৌনক পাল, সহেলি হালদাররা ওই পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক ছিলেন। শ্রীরামপুর কলেজের ছাত্রী সহেলি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় বাবার কার্ড নিয়ে ওখানে পড়তে যেতাম। পাঁচ বছর আগে নিজের কার্ড হয়। কিন্তু এখন আর যাই কী করে! দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো বইমেলা থেকে বই কিনতে হয়। কিন্তু গ্রন্থাগারের তাকভর্তি বইয়ের গন্ধ সেখানে কোথায়!’’ চন্দননগর কলেজের পড়ুয়া রৌনকেরও একই অভিমত। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রন্থাগারের এই অবস্থায় কষ্ট হয়। আমার ফোনের নেশা নেই। বই পড়ার নেশা আছে। কিন্তু বাড়ির পাশের

লাইব্রেরিটাই বন্ধ।’’

দোতলা পাঠাগার ভবন লাগোয়া রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ। সেখানে নাটক-সহ নানা অনুষ্ঠানের চর্চা হয় কয়েক দশক ধরে। ওই চৌহদ্দিতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাশে হাইস্কুল, খেলার মাঠ। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, ‘‘গোটা চত্বর মিলিয়ে ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার জায়গা। কিন্তু লাইব্রেরি ধুঁকতে থাকায় তাতে কিছুটা ছেদ পড়েছে।’’ তাঁরা চাইছেন, দ্রুত পূর্ণ সময়ের পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ হোক। আগের অবস্থায়

ফিরুক পাঠাগার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Guptipara Library Readers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE