Advertisement
০৬ মে ২০২৪

টাকা ফেরত চাওয়ায় বৃদ্ধাশ্রমে দম্পতিকে হুমকির অভিযোগ

এক ছেলে ও দুই মেয়ে প্রতিষ্ঠিত। সব মিলিয়েই সুখের সংসার কাটাচ্ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি সোমদেব ও যূথিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর কাটল যূথিকাদেবীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ায়। ১৯৯৬ সালে ওই ঘটনার পর পেশায় ব্যবসায়ী সোমদেববাবু স্ত্রীর চিকিৎসাও শুরু করেন। ক্রমে নিজেও নানা রোগে আক্রান্ত হন।

সোমদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও যূথিকা দেবী।—তাপস ঘোষ।

সোমদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও যূথিকা দেবী।—তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

এক ছেলে ও দুই মেয়ে প্রতিষ্ঠিত। সব মিলিয়েই সুখের সংসার কাটাচ্ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি সোমদেব ও যূথিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর কাটল যূথিকাদেবীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ায়। ১৯৯৬ সালে ওই ঘটনার পর পেশায় ব্যবসায়ী সোমদেববাবু স্ত্রীর চিকিৎসাও শুরু করেন। ক্রমে নিজেও নানা রোগে আক্রান্ত হন। তাঁদের নিয়ে ছেলেমেয়েদের যাতে কষ্ট পেতে না হয় সে জন্য দু’জনেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

কলকাতায় শিয়ালদহে বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ওই দম্পতি ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে চন্দননগরের বোড়াই চন্ডীতলার রামকৃষ্ণ বৃদ্ধাশ্রমে দুটি ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করেন। গঙ্গার ধার ঘেঁষা এই জায়গায় শেষ জীবনটা নিরিবিলিতে কাটাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই বৃদ্ধাশ্রমই এখন তাঁদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমদেববাবু বলেন, ‘‘স্ত্রী কলেজ শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর ঠিক করি দু’জনে সংসার ছেড়ে অন্যত্র থাকব। ছেলেমেয়েদের বোঝা হবো না। সেইমতো এই বৃদ্ধাশ্রমে আসি। প্রথমে হোম কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রিম ২ লক্ষ টাকা জমা দিই। প্রতি মাসে দু’জনের খরচ বাবদ মাথাপিছু ৫০০০ টাকা দিতে হতো।’’ যদিও চিকিৎসার খরচ নিজেরাই বহন করতেন বলে সোমদেববাবু জানান। তাঁর অভিযোগ, এই ভাবে কয়েক বছর কাটার পর হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং বলে এর পরিবর্তে মাসিক খরচের টাকা লাগবে না। সেইমতো তাঁরা ১০ লক্ষ টাকার বদলে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দেন। হোম কর্তৃপক্ষ তা নিয়েও নেন এবং জানান হোম ছেড়ে দিলে ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুদিন পর ফের মাসিক ৪ হাজার টাকা করে দাবি করেন হোম কর্তৃপক্ষ। তাঁরা তাতেও রাজি হন। কিন্তু তার পর থেকেই শুরু হয় তাঁদের উপর মানসিক অত্যাচার।’’ সোমদেববাবু বলেন, ‘‘হোম কর্তৃপক্ষ ওই ১০ লক্ষের বাকি টাকার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। সে সব সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিই স্ত্রীকে নিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছেই ফিরে যাব। ’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হোম কর্তৃপক্ষকে সে কথা জানিয়ে জমা টাকা ফেরত চাইলে তারা হুমকি দিতে শুরু করে। এমনকী হোম থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে বলে জানায়।’’

শেষ পর্যন্ত ওই দম্পতি গত ২০ জুলাই হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মহাকুমাশাসক এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। চন্দননগরের এসডিও দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে আমাদের এক প্রতিনিধি দল সরেজমিন তদন্তে গিয়েছিলেন। দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

বৃদ্ধাশ্রমের মালিক কাশীনাথ রায়ের দাবি, ‘‘ওই অসহায় দম্পতিকে কেন হুমকি দেবো। কোনওরকম বাজে ব্যবহার ওঁদের সঙ্গে করা হয়নি। ওঁরাই হঠাৎ এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জমা টাকাও ফেরত চান। টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় জানিয়েছিলাম সঙ্গে সঙ্গে অত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। একটু সময় দিলে টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Refund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE