Advertisement
E-Paper

ট্রেন দুর্ঘটনা রুখল হুগলির তিন খুদে, পুরস্কার রেলের

শুভ মণ্ডল, রূপা বৈদ্য, অনিল সিংহ— ঝুপড়িবাসী তিন খুদে ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে হইচই ফেলে দিয়েছে গোটা পান্ডুয়ায়।

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৭
ত্রাতা: অনিল, শুভ আর রূপা। নিজস্ব চিত্র

ত্রাতা: অনিল, শুভ আর রূপা। নিজস্ব চিত্র

এতদিন ওরা ছিল খুব সাধারণ। আর এখন চর্চার কেন্দ্রে।

এতদিন ওদের কেউ চিনত না। এখন ওরা কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে।

শুভ মণ্ডল, রূপা বৈদ্য, অনিল সিংহ— ঝুপড়িবাসী তিন খুদে ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে হইচই ফেলে দিয়েছে গোটা পান্ডুয়ায়। ইতিমধ্যে হাওড়ায় ডিআরএম অফিসে গিয়ে নগদ তিন হাজার টাকা করে আর্থিক পুরস্কার নিয়ে এসেছে তারা। তার পরেও রেলের তরফে মিলেছে তাদের পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্বের আশ্বাস। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে তাদের পরিবার।

পান্ডুয়ার আর্তি মোড়ের রেললাইনের ধারে অন্তত আড়াইশো ঝুপড়ি রয়েছে। তিন খুদের সেখানেই বাস। তিন জনেরই বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। শুভ রানাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। রূপা ও অনিল তিন্নার হঠাৎ কলোনি প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। দুপুরে স্কুল। সকালটা প্রতিদিন তাই রেললাইনের ধারে খেলে শুভ-রূপারা। গত ৬ জানুয়ারি তেমনই খেলছিল। হঠাৎ শুভর চোখে পড়ে রেললাইনে ফাটল। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ে বড়দের মুখে শোনা কথাটাও—‘লালা কাপড় দেখালে ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়’।

ফাটলের সামনে রূপা, অনিলকে দাঁড় করিয়ে শুভ দৌড়য় ঘরে। মায়ের লাল কাপড় ছিঁড়ে এনে দাঁড়িয়ে পড়ে রেললাইনের ধারে। তখন ৭টা ৫০। ওই লাইনেই আসছিল বর্ধমান ছেড়ে আসা ডাউন ব্যান্ডেল লোকাল। তিন খুদেকে লাল কাপড় ওড়াতে দেখে ফাটলের বেশ খানিকটা আগে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন চালক। তার পরে শুভর কথায়, ‘‘চালক নাম-ঠিকানা নিয়ে চলে গেলেন। কয়েকজন যাত্রী নেমে এসেছিলেন। তাঁরা বললেন, ঠিক কাজ করেছো। খুব ভাল।’’

সে দিনের ঘটনা ওই পর্যন্তই। তিন খুদের বাড়ির লোকই তাদের তৎপরতার জন্য বাহবা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা চমকে যান পরের দিন। পূর্ব রেলের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে যখন ওই ঝুপড়িতে পৌঁছন। তিন খুদে ও তাদের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে রেলের কর্তারা হাওড়ায় আসেন। ডিআরএম অফিসে শুভদের হাতে আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বুধবার আবার তিন জনের স্কুলে গিয়ে তিন জনের হাতে স্কুলব্যাগ, শীতবস্ত্র এবং ফুলের তোড়া তুলে দেন মৈত্রেয়ীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ওরা আমাদের বড় ক্ষতি থেকে বাঁচাল। তাই রেল কর্তৃপক্ষ এই খুদেদের সঙ্গে থাকবে। এদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে রেল।’’

এই কাণ্ডে চমকে গিয়েছেন তিন খুদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। শুভর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারি বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না ছেলেটার এত বুদ্ধি! ও যে ভাবে মানুষের জীবন বাঁচাল তার তুলনা হয় না। স্কুলে ওর পড়াশোনার আর কোনও খরচ লাগবে না।’’

ঘরে হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে খুশি উপচে পড়ছে শুভর বাবা লক্ষ্মণবাবুর মুখে। তিনি বলেন, ‘‘ও যে মায়ের কাপড় ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে, আগে বলেনি। সত্যি ছেলেটা এই বয়সে অনেক বড় কাজ করল। ওর পুরস্কারের তিন হাজার টাকা আমি ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছি। ও বড় হোক।’’ একই রকম খুশি রূপার বাবা মুকুন্দবাবু এবং অনিলের মা শর্মিলাদেবী।

Accident Train Children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy