খানাকুলের রাজহাটিতে ভরসা নৌকা। ছবি: মোহন দাস
দামোদরের জলের তোড়ে গত বুধবার ভেসে গিয়েছিল আমতা-ডিহিভুরসুট রাজ্য সড়কের প্রায় ২০০ ফুট। ফলে, এখনও হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের সঙ্গে হুগলির খানাকুলের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। বিপাকে দুই জেলার মানুষই।
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন হাওড়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা। কারণ, এই রাস্তা দিয়েই সরাসরি হাওড়ার বাগনান, আমতা ও উদয়নারায়ণপুর থেকে যাওয়া যায় হুগলির খানাকুল হয়ে আরামবাগ এবং তারকেশ্বরে। প্রতিদিন দুই জেলার বহু মানুষ রাস্তাটি ব্যবহার করেন। হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই রাস্তা ধরেই আলু এবং আনাজ নিয়ে ট্রাক আসে হাওড়ায়। বুধবার থেকে সেই ট্রাক আসাও বন্ধ।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশন জানিয়েছে, রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হবে।
যে জায়গায় রাস্তাটি ভেঙেছে, সেটি উদয়নারায়ণপুরের ঘোলা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বুধবার ওই রাস্তা দিয়ে যে ভাবে দামোদরের জল বইছিল, তার ধকল রাস্তাটি নিতে পারেনি। রাস্তার ধারের কয়েকটি একতলা, দোতলা পাকা বাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ওই সব বাড়ির লোকজন কোনওমতে প্রাণ নিয়ে পালান। এর আগেও বন্যায় রাস্তাটিতে আংশিক ভাঙন হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে একটা বড়সড় অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এই প্রথম।
দুই জেলাতেই প্লাবনের জল নামছে। পরিস্থিতির উন্নতি হতেই শুরু হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষা। তার মধ্যে যেমন রয়েছে রাস্তা বা বাঁধ ভাঙা, তেমনই চাষ নষ্ট হওয়া। প্রশাসনের হিসেবে, উদয়নারায়ণপুরে ৫,৫৭৬ হেক্টর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০০ নলকূপ নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে বহু বাড়ি। আমতা-২ ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক। দুটি ব্লকেই সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
হুগলি জেলা প্রশাসনকে চিন্তায় রেখেছে বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রাণহানি। সোমবার খানাকুলে আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, বলপাই গ্রামের নিমাই সামুই (৪২) গত শনিবার মুচিঘাটা থেকে ফেরার পথে পা পিছলে বন্যার জলে পড়ে তলিয়ে যান।
সোমবার সকালে তাঁর দেহ মেলে। বাড়ির সামনেই সপর্দষ্ট হয়ে গত শনিবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জগৎপুরের শুভ চৌধুরী (১২)। রবিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। মৃত তৃতীয় জনের নাম কার্তিক সাতিক (৭২)। বাড়ি শঙ্করপুরে। সোমবার সকালে বাড়ির কাছেই জমা জলে তিনি ডুবে যান। দেহটি স্থানীয় মানুষ উদ্ধার করেন। ত্রাণের দাবিতে ক্ষোভও অব্যাহত।
আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা নিজের গ্রাম বলুন্ডিতে ত্রাণ দিতে গেলে ত্রিপলের দাবি তোলেন মহিলারা। লকুচক গ্রামে ভাঙা বাঁধ কেন মেরামত হচ্ছে না, সেই প্রশ্নেও মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিধায়ক। ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক না-হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন প্রশাসনের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy