রথযাত্রা-লোকারণ্য: গুপ্তিপাড়ায় রথের ভিড়। ছবি: সুশান্ত সরকার
হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ম্বরে শুরু হয়ে গেল রথযাত্রা উৎসব। রবিবার ছিল সোজারথ। মাহেশ থেকে গুপ্তিপাড়া বা চন্দননগর—কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রথে চাপিয়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহকে নিয়ে যাওয়া হল মাসির বাড়িতে। মাহেশ, গুপ্তিপাড়ায় ছিল সিসি ক্যামেরা, ড্রোন ক্যামেরার নজরদারি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যেই মাহেশকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মাহেশের রথযাত্রা এ বার ৬২১ বছরে পড়েছে। এ দিন দুপুর থেকে সময় যত গড়িয়েছে, ততই পাল্লা দিয়ে ভিড় বেড়েছে। বিকেল চারটে নাগাদ মাহেশের রথ টানা হয়। ছিলেন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, তপন দাশগুপ্ত, বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার-সহ অনেক নেতা-মন্ত্রী। নির্বিঘ্নেই সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ রথটানা শেষ হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এ দিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছিল পুলিশ।
এ দিন গুপ্তিপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন হুগলির জেলা বিচারক পার্থ লাহিড়ী, তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় প্রমুখ। প্রথা অনুযায়ী এখানে দু’দফায় রথ টানা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ রথ মাসির বাড়িতে পৌঁছয়। হুগলি ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকেও লোক এসেছিলেন এই রথ দেখতে। বহু মানুজিরাট কলোনির নমিতা দাস পাঁচ মাসের ছেলে কোলেই দৌড়চ্ছিলেন রথ টানবেন বলে। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে আমি রথ দেখতে আসি।’’
রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে অশান্তি এড়াতে এ দিন সকাল থেকেই চন্দননগর গঞ্জের বাজার এলাকা পুলিশ দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়। দুপুর ৩টে নাগাদ শোভাযাত্রা সহকারে রথযাত্রা শুরু হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ রত্না দে নাগ। প্রায় দুই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সন্ধ্যার আগেই রথ পৌছায় চন্দননগর তালডাঙায়।
আরামবাগের প্রাচীন রথযাত্রা উৎসবের মূল আকর্ষণ হল সাত দিনের মেলা। আরামবাগের সদরঘাটের রথে অবশ্য জগন্নাথ নন, চড়েন রাধাবল্লভ। কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে বর্ধমানের রাজা এই বিগ্রহটি দান করেছিলেন আরামবাগের সদরঘাটের বিহারীনাথ মুখোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষকে। সেই সময় ওডিশার এক ব্রাহ্মণ সেই বিগ্রহের পুজো করতেন। তিনিই কাঠের রথযাত্রা চালু করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে অনেক দিন রথযাত্রা বন্ধ ছিল। বাংলার ১৩৩২ সালে স্থানীয় নাগ পরিবারের বিন্দুবালা দাসী স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁর মেয়ে কুমুদিনী দাসীর সঙ্গে পিতলের রথ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই ঘটা করে রথযাত্রা শুরু হয়। এ দিন সদরঘাট থেকে স্থানীয় ব্যানার্জিপাড়া পর্যন্ত রথ টানা হয়।
পুরশুড়ার দেউলপাড়ায় রথে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মেলবন্ধন ঘটে। দেউলপাড়ার বাসিন্দা প্রয়াত ভুদারীনাথ বাইরি গ্রামবাসীদের মধ্যে সখ্যতা বজায় রাখতে ১৯৪২ সালে এই রথযাত্রার প্রচলন করেছিলেন। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে ফের রথযাত্রা চালু হয়েছে। কারুকার্যখচিত কাঠের রথটির উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট, চওড়া ১৪ ফুট। এই রথে চড়েন লক্ষ্মী-নারায়ণ। এ দিন রথের রশি টানেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। হরিপালের জেজুড় গ্রামে রবিবার রথযাত্রা উৎসব পালিত হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy