Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বালির বাঁধ গুঁড়িয়ে প্রাচীর তুলল তৃণমূল

ফলাফল জানা হয়ে গিয়েছিল ভোটের দিনই। সে দিন নিজেদের ‘ঘরবন্দি’ করে রেখেই কার্যত হার ঘোষণা করেছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। আর শনিবার সকালে বালির ভোট বাক্স খুলতেই নিজেদের জয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। পাঁচ বছর আগে তিনটি আসন দখল করে বালিতে প্রবেশ তৃণমূলের। এ বার সেখানে পুরোপুরি পরিবর্তন। হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত বালির ১৬টি শূন্যপদের নির্বাচনে সব ক’টি আসনেই সবুজের জয়-জয়কার।

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

ফলাফল জানা হয়ে গিয়েছিল ভোটের দিনই। সে দিন নিজেদের ‘ঘরবন্দি’ করে রেখেই কার্যত হার ঘোষণা করেছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। আর শনিবার সকালে বালির ভোট বাক্স খুলতেই নিজেদের জয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। পাঁচ বছর আগে তিনটি আসন দখল করে বালিতে প্রবেশ তৃণমূলের। এ বার সেখানে পুরোপুরি পরিবর্তন। হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত বালির ১৬টি শূন্যপদের নির্বাচনে সব ক’টি আসনেই সবুজের জয়-জয়কার।

৩৭ বছর ধরে বালি পুরসভা নিজেদের দখলে রেখেছিল বামেরা। ২০১০-এর পুরনির্বাচনে তৃণমূলের ঝোড়ো হাওয়ায় প্রথম বালি পুরসভার বেলুড় অঞ্চলে তিনটি আসন দখল করে তৃণমূল। এর পরে ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের লাল-দুর্গ বালিতেও ফাটল ধরে। এখানেই শেষ নয়। ২০১৩ লোকসভা উপনির্বাচন এবং ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনেও বালিতে বামেদের ফলাফল হয় শোচনীয়। শেষ লোকসভা নির্বাচনেও মাত্র ২টি ওয়ার্ডে (আগের ৩৫টি ওয়ার্ডের নিরিখে) এগিয়ে ছিল বামেরা। যদিও হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে ১৬টি ওয়ার্ডের হিসেবে বামেদের সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় শূন্যে। আর সেই শূন্যই এ বারের নির্বাচনে বালির সিপিএমের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা। বালির সঙ্গে যুক্ত হয়ে হাওড়ার মোট ওয়ার্ড সংখ্যা হয়েছে ৬৬। তার মধ্যে এ দিন বালির ১৬টি ওয়ার্ডে জিতে হাওড়া পুরনিগমে তৃণমূলের আসন সংখ্যা বেড়ে হল ৬২।

জয় সম্পর্কে এক প্রকার নিশ্চিত হয়েই এ দিন সকাল ৭টা থেকে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষণ মন্দিরের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটগণনা কেন্দ্রে ঢোকার দু’দিকের রাস্তাতেই ছিল পুলিশের ব্যারিকেড। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মতো সেখানেই সবুজ আবির, মালা, ঢাক, ব্যান্ড নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। সকাল ৮টায় গণনা শুরু হতেই দেখা যায় ১৬টি ওয়ার্ডের কোথাও আসেননি সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থী ও তাঁদের এজেন্টরা। এমনকী রাস্তায়ও কোথাও তাঁদের দেখা মেলেনি। তবে ভোটের দিনের মতো এ দিনও বেলুড়ে সিপিএমের জোনাল অফিসের গেটে বাইরে থেকে তালা ঝোলানো ছিল। ভিতরে অবশ্য টিভিতে সমগ্র ভোটের ফলাফল নজর রেখেছিলেন স্থানীয় নেতৃত্বেরা। সিপিএমের হাওড়া জেলার সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘প্রার্থীরা অনেকেই বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের হুমকির মুখে পড়ে তাঁরা গণনা কেন্দ্রে যেতে পারেননি। ভোট ঘোষণার পর থেকেই বালিতে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল। তবে সন্ত্রাস উপেক্ষা করেও গণনা কেন্দ্রে যাওয়া উচিত ছিল। কেন যাননি, তা নিয়ে আলোচনা করব।’’

বেলা বাড়তেই ক্রমশ ১৬টি ওয়ার্ডে শাসকদলের প্রত্যাশিত জয়ের ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু করে। আর সেই খবর গিয়ে পৌঁছয় লালাবাবু সায়র রোডের ব্যারিকেডের ওপারে অপেক্ষারত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের কাছে। শুরু হয় উচ্ছাস। রাঙিয়ে দেওয়া হয় সবুজ আবিরে। এর মধ্যেই সেখানে এসে হাজির হন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের হাওড়া জেলার সভাপতি অরূপ রায়। তাঁকে ঘিরেও শুরু হয় কর্মীদের উল্লাস। অরূপবাবুর কপালে সবুজ তিলক ও তাঁকে মালা পরিয়ে দেন কয়েক জন কর্মী। এর পরেই রাস্তার এক ধারে দলীয় ক্যাম্প অফিসে বসেন অরূপবাবু। বললেন, ‘‘উন্নয়নের পক্ষে এ জয় বালির মানুষের। প্রায় ৪০ বছর পরে বালিতে মানুষ নিজেদের গণতন্ত্র প্রয়োগ করতে পেরেছেন।’’ তবে ঘুষ-কাণ্ডের জেরে বালিতে সিপিএম বেশ ব্যাকফুটে চলে যাওয়ায় তৃণমূলের জয়ের পথ আরও মসৃণ হয়েছে বলেই এ দিন দাবি করেন অরূপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ঘুসুড়ির ঘুষ-কাণ্ড সামনে আসায় সিপিএমকে বালির মানুষ আরও পিছনে সরিয়ে দিয়েছে। মানুষ বুঝতে পেরেছেন কি ভাবে তাঁদের টাকা লুঠ করা হয়েছে।’’

এ দিন সকাল সওয়া ১১টা বাজতেই প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায় ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব চেয়ে বেশি, ৮৯৪২টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ৬৬ নম্বরের প্রার্থী নারায়ণ মজুমদার। সমস্ত প্রার্থীরা এসে দলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেন। এর মধ্যেই লালাবাবু সায়র রোডে চলে আসেন সাংসদ প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ বেলায় ‘বাজিমাত’ করতে আসেন বালির বিধায়ক সুলতান সিংহও।

অসুস্থতার কারণে গোটা ভোট প্রচারে এক দিনও বালির ময়দানে দেখা যায়নি সুলতানকে। তবে ভোটের দিন সকালে কন্যাকে নিয়ে গাড়িতে চেপে কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তন ওই পুলিশ কর্তাকে। কিন্তু এ দিন কর্মীদের জয়ে কার্যত উচ্ছ্বসিত সুলতান অবশ্য সবুজ আবির মেখে ঢাকের তালে কোমর নাচালেন। বালির বহু বিতর্কিত এই বিধায়ক যদিও বলছেন, ‘‘এটা জয়ের আনন্দ।’’ কিন্তু বালির রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, ‘‘২০১৬-এ নিজের পিঠ বাঁচাতেই বালির ময়দানে কোমর বেঁধে নেমেছেন সুলতান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE