Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নির্দলের সঙ্গে কুস্তি, মরিয়া তৃণমূল

কোথাও সূর্য বনাম জোড়া ফুল। কোথাও জোড়াপাতা বনাম জোড়া ফুল। দিন যত এগোচ্ছে, কপালে ভাঁজ বাড়ছে শাসকদলের। শুধু বিরোধীদের সঙ্গেই তো নয়, এ বার যে হুগলির বহু ওয়ার্ডে তৃণমূলকে লড়তে হবে নানা প্রতীকে দাঁড়িয়ে পড়া ‘নিজেদেরই লোক’-এর সঙ্গে। ‘নিজেদের লোক’— অর্থাৎ, যে সব তৃণমূল নেতা দলের টিকিট না পেয়ে পুরভোটে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বা দলে মতানৈক্যের কারণে যাঁরা ক্ষোভে নির্দলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
হুগলি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৩
Share: Save:

কোথাও সূর্য বনাম জোড়া ফুল।

কোথাও জোড়াপাতা বনাম জোড়া ফুল।

দিন যত এগোচ্ছে, কপালে ভাঁজ বাড়ছে শাসকদলের। শুধু বিরোধীদের সঙ্গেই তো নয়, এ বার যে হুগলির বহু ওয়ার্ডে তৃণমূলকে লড়তে হবে নানা প্রতীকে দাঁড়িয়ে পড়া ‘নিজেদেরই লোক’-এর সঙ্গে।

‘নিজেদের লোক’— অর্থাৎ, যে সব তৃণমূল নেতা দলের টিকিট না পেয়ে পুরভোটে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বা দলে মতানৈক্যের কারণে যাঁরা ক্ষোভে নির্দলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিছু দিন আগেই এমন ২২ জন নির্দল প্রার্থীকে দল থেকে পাঁচ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তাতেও ভোটের ময়দানে লড়াইটা যে সহজ হবে না, সে কথা মানছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত— ছায়ার সঙ্গে কুস্তি করেই এ বার হাঁফিয়ে উঠছে শাসক দল।

তবে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত দাবি করেছেন, ‘‘নির্দল হিসেবে দলের লোকেরা দাঁড়িয়ে পড়ায় কোথাও কোথাও কিছু সমস্যা রয়েছে। সে সব সামলে নিচ্ছি। আমাদের জয়ের পথ ওরা আটকাতে পারবে না।’’

তপনবাবু ওই দাবি করলেও জয় যে সহজ হবে না তা ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন জেলা তৃণমূল নেতাদেরই একাংশ। তাঁদের মতে, উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া— জেলার ১০টি পুরসভার ক্ষেত্রে নির্দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। একই পরিস্থিতি ডানকুনির মতো গ্রামঘেঁষা পুরসভার ক্ষেত্রেও। বাঁশবেড়িয়াতে ইতিমধ্যেই শাসক দলের এক মহিলা প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে দলেরই বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সব ক্ষেত্রেই নির্দলেরা শাসক দলের প্রার্থীদের মতো উন্নয়নের একই প্রতিশ্রুতি বিলোচ্ছেন।

প্রতিবার পুরভোটের সময়েই নির্দল-কাঁটা শাসক দলকে ভোগায়। কিন্তু এর আগে বাম আমলের চেয়ে এ বার হুগলিতে সেই সংখ্যাটা যেন অনেকটাই বেশি। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। উত্তরপাড়া পুরসভায় তৃণমূলের বিদায়ী পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান পিনাকী ধামালি-সহ কয়েক জন কাউন্সিলরকে এ বার টিকিট দেয়নি দল। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবে লড়ছেন তৃণমূল নেতা অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। অমিতাভবাবু আগের বোর্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এ বার টিকিট পাননি। তিনি পিনাকীবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। ক্ষোভ থেকেই পিনাকীবাবু কয়েক জনকে দাঁড় করিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের। ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূল প্রার্থীকে ভাবাচ্ছে নির্দল বন্দনা চক্রবর্তী।

উত্তরপাড়া কোনও ব্যতিক্রম নয়। এই ছায়াযুদ্ধ প্রায় প্রতিটি পুরসভাতেই চলছে। কোন্নগর পুরসভায় মোট ২০টি ওয়ার্ড। সেখানে শাসক দলেরই তিন জন নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। বিদায়ী পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে টিকিট নিয়ে আর এক তৃণমূল নেতা অসচিত চক্রবর্তীর কোন্দলও কারও নজর এড়ায়নি। শ্রীরামপুর পুরসভায় শাসক দলের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে তিনটি আসনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ৩ জন। রিষড়া পুরসভায় মোট ২৩টি ওয়ার্ড। সেখানে দলেরই মোট চার নেতা নির্দল হিসেবে লড়ছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী সাকির আলি। জাহিদ হোসেন লড়ছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁদের জায়গা করে দিতে বিদায়ী পুরবোর্ডের কাউন্সিলর শেখ আখতারকে দল টিকিট দেয়নি। দলের এই সিদ্ধান্তে বেজায় ক্ষুব্ধ হন আখতার। তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন নির্দল হয়ে। এখন জাহিদ বনাম আকতারের লড়াইয়ে জমজমাট রিষড়ার পুরভোট।

একই ভাবে বৈদ্যবাটি পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তৃণমূলের অজয়প্রতাপ সিংহের সঙ্গে ওই দলেরই বিদায়ী কাউন্সিলর প্রবীর পাল এখন সম্মুখ সমরে। প্রবীরবাবু নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। প্রচারের পালে হাওয়া তুলতে অবাধে কুৎসা প্রচারও চলছে বলে অভিযোগ। এর সুযোগ নিতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বামেরা। বাঁশবেড়িয়ায় শাসক দলের লড়াই শুধু আকচা-আকচিতেই থেমে নেই। নির্দলের পক্ষ থেকে তাঁর উপরে হামলার আশঙ্কায় সেখানকার বিদায়ী পুরপ্রধান রথীন দাস মোদক পুলিশ প্রহরায় প্রচার করেছেন। একই চিত্র চন্দননগর, চাঁপদানিতেও। কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল আগেই জিতে যাওয়ায় তারকেশ্বর এবং আরামবাগে অবশ্য এ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

শাসক দলের নেতারা মনে করছেন, এ বার এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে টিকিটের জন্য তুঙ্গ প্রত্যাশা। তার উপর বহু আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সব ক্ষেত্রে গতবারের বিজয়ীকে টিকিট দেওয়া যায়নি। রয়েছে গোষ্ঠী-কোন্দলও। সব মিলিয়েই ক্ষোভ জন্মেছে।

১১টি পুরসভার ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে নির্দলের এই দ্বৈরথে কিছুটা আশার আলো দেখছে বিরোধীরা। তারা মনে করছে, ভোট কাটাকুটিতে তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে। ফাঁকতালে বিভিন্ন পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড সহজে তাদের হাতে চলে আসতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE