ছড়িয়ে আছে তাণ্ডবের নমুনা। ছবি: দীপঙ্কর দে।
কলেজের বার্ষিক উৎসবে অনুদান না-দেওয়ায় দলবল নিয়ে হরিপালের একটি পানশালায় ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হরিপালের গোপীনগরের কাছে হড়া এলাকার দোতলা ওই পানশালায় হামলায় মূল অভিযুক্ত বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতা সুমিত সরকার। পানশালাটি বন্ধের দাবিতে হামলাকারীরা কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধও করে। গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। কিন্তু নাগালে পেয়েও পুলিশ হামলাকারীদের ধরেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন পানশালাটির কর্মীরা।
হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর দাবি, ‘‘‘পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই হামলাকারীরা চলে যায়। পুলিশের সামনে কিছু ঘটেনি। নির্দিষ্ট মামলা রুজু করা হয়েছে। হামলায় অভিযুক্তদের ধরা হবে।’’
পানশালাটির মালিক শীলা সাহার অভিযোগ, ‘‘কর্মীদের বেতনের জন্য ক্যাশবাক্সে ৩৫ হাজার টাকা রাখা ছিল। সেই টাকা হামলাকারীরা হাতিয়ে নেয়। একটি ল্যাপটপও চুরি করে। ডিসেম্বরে কলেজ-সোশ্যালের জন্য ওরা দশ হাজার টাকা চেয়েছিল। না দেওয়ায় ভাঙচুর করল।’’
হামলার অভিযোগ মানেননি টিএমসিপি নেতা সুমিত। তাঁর দাবি, ‘‘ওই পানশালায় মধুচক্র চলে। আমরা তার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম। ভাঙচুরের বিষয়ে কিছু জানি না। অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের টাকা তুলতে হয় না। ওঁরা মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।’’ পানশালায় মধুচক্র চালানোর কথা মানেননি শীলাদেবী। জেলা টিএমসিপির সহ-সভাপতি কৌশিক শীল বলেন, ‘‘ওই রেস্তোরাঁয় খারাপ কাজ হয়। তাই প্রতিবাদ হয়েছে। ভাঙচুরে সুমিত জড়িত কি না, দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখা হবে। ও দোষী প্রমাণিত হলে দলই ব্যবস্থা নেবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেলা ১টা নাগাদ জনা ত্রিশ যুবক রড-লাঠি নিয়ে মোটরবাইকে চেপে বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রোডের ধারে ওই পানশালায় চড়াও হয়। পানশালাটি এ দিন বন্ধ থাকলেও রেস্তোরাঁটি খোলা ছিল। তবে, রেস্তোরাঁয় লোকজন ছিলেন না। পানশালায় ঢুকেই ম্যানেজার ও কর্মীদের চড়থাপ্পড় মেরে বাইরে বের করে দেয় হামলাকারীরা। তার পরে নির্বিচারে এসি, ফ্রিজ, টিভি, ল্যাপটপ, সিলিং ফ্যান, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। হামলা চলাকালীন তিনটি অটোতে আরও কিছু ছেলে এসে হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের মুখে ছিল শাসক দলের স্লোগান। মুখ্যমন্ত্রীর নামে জয়ধ্বনি। ভাঙচুরের খবর পেয়ে হরিপাল থানা থেকে কয়েক জন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে পৌছন। কিন্তু অত ছেলের সামনে তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। তাঁদের সামনেই ভাঙচুর চলে। পানশালা বন্ধের দাবিতে অবরোধও করে হামলাকারীরা। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে তাদের সরিয়ে দেয়। বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পানশালার দু’টি তলাই লন্ডভন্ড। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা গৌর শাসমল সেখানে রাঁধুনির কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আচমকা প্রচুর ছেলে ঢুকে আমাদের বের করে দেয়। রড, লাঠি ছাড়াও রান্নাঘর থেকে বড় হাতা নিয়ে সবকিছু তছনছ করে। ভয়ে বাইরে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম।’’ আর এক কর্মী বলেন, ‘‘পুলিশ তো দর্শকের মতোই রয়ে গেল। অবরোধ তোলা ছাড়া কিছুই তো করতে দেখলাম না। ঘটনায় আমরা রীতিমতো আতঙ্কিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy