Advertisement
E-Paper

নির্মল জেলা, তবু নেই ডোমপাড়ায় শৌচাগার

সরকারি ভাবে ঘোষিত ‘নির্মল জেলা’ হুগলি। অথচ সেই নির্মল জেলারই পান্ডুয়া ব্লকের ডোমপাড়ার মানুষ এখনও শৌচাগার কি জানেন না। প্রাকৃতিক প্রয়োজনে এখনও তাঁদের কাছে মাঠঘাটই উপায়।

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৬
অসমাপ্ত শৌচাগার।—নিজস্ব চিত্র।

অসমাপ্ত শৌচাগার।—নিজস্ব চিত্র।

সরকারি ভাবে ঘোষিত ‘নির্মল জেলা’ হুগলি। অথচ সেই নির্মল জেলারই পান্ডুয়া ব্লকের ডোমপাড়ার মানুষ এখনও শৌচাগার কি জানেন না। প্রাকৃতিক প্রয়োজনে এখনও তাঁদের কাছে মাঠঘাটই উপায়।

পান্ডুয়ার ডোমপাড়া এলাকায় যৌনপল্লি হিসাবে পরিচিত। পাণ্ডুয়া স্টেশন থেকে মাত্র সাত মিনিটের হাঁটা পথে পাকা রাস্তার ধারে ফুটবল মাঠের কাছেই প্রায় সত্তরটি ঘর নিয়ে এই পাড়ায় যৌনকমীদের ঠাঁই। সব ঘরই কাঁচা মাটির দেওয়াল, টিন ও টালির ছাউনির। কারও ঘর আবার দরমার উপর পলিথিন দিয়ে মোড়া। এঁদের সন্তানেরা কেউ ভাল ফুটবল খেলে, কেউ ক্রিকেট খেলে। এখানকার ছেলেমেয়েরা প্রাইমারি স্কুলে যায়। কোনও ঘরেই শৌচাগার নেই। রোদ-বৃষ্টি-শীতে লাগোয়া মাঠঘাটই তাঁদের প্রাকৃতিক কাজ সারার জায়গা। তবে শুধু শৌচাগার নয়, এখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ সরকারি কোনও প্রকল্পের সুবিধা তাঁদের কপালে জোটে না। রাস্তাঘাটেরও শোচনীয় দশা।

যৌনপল্লির এক কর্মী সায়রা বিবি বলেন, ‘‘এখানে তিরিশ বছরেরও বেশি বাস করছি। কোনও পাকা রাস্তা নেই। বার্ধক্য ভাতা, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো সরকারি প্রকল্প থেকে আমরা বঞ্চিত। ‘মিশন নির্মল বাংলা’র নামে সরকার দেদার খরচ করছে। পাণ্ডুয়া ব্লকও মিশন নির্মল বাংলার পুরস্কার পেয়েছে। অথচ এখানে কোনও শৌচাগার হয়নি।’’ তিনি জানান, অন্তত দেড়শো মানুষ বসবাস করলেও তাঁদের জন্য কোনও শৌচাগার নেই। কয়েক মাস আগে পাণ্ডুয়া বিডিও অফিস থেকে ভোরবেলায় হুইসল বাজিয়ে মাঠঘাটে শৌচকর্ম করতে আসা মানুষদের তাড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের বক্তব্য ছিল শোচাগার না থাকাতেই তাঁরা বাধ্য হয়ে মাঠঘাটে আসেন। সেই সময়েই নির্মল বাংলার হাত ধরে তাঁদের জন্য শৌচাগার তৈরি করে দেওয়ার দাবি ওঠে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, হুগলি জেলা পরিষদ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং পঞ্চায়েত থেকে ২০ হাজার টাকা এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে। শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হলেও আজও তার অসম্পূর্ণ। ফলে এখনও মাঠঘাটেই প্রাকৃতিক কাজ সারছেন এলাকার মানুষ। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির পাণ্ডুয়া শাখার সম্পাদিকা আশা সরকার বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় শৌচাগার অনুমোদন হলেও পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত গড়িমসি করছে। কাজে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫-৬ মাস ধরে কাজও বন্ধ।’’

দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধিকর্তা সিন্টু বাগুই বলেন, ‘‘পাণ্ডুয়ার যৌনপল্লিতে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে সরকারি অনুদান পেলেও পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত নিম্নমানের শৌচাগার তৈরি করছে। কাজও শেষ করেনি। পঞ্চায়েত প্রধানকে জানালেও তিনি কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে জানিয়েছি। বিডিওর কাছে গত ২৪ নভেম্বর লিখিত অভিযোগও করেছি।’’ বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। শৌচাগারে কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয় তা দেখা হবে।’’

পঞ্চায়েত প্রধান অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘শৌচাগার তৈরির জন্য জেলা পরিষদ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছি। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। ওই এলাকায় দুটি শৌচালয় ও একটি স্নানের ঘর তৈরি হচ্ছে। শৌচালয়ের জন্য সেপটিক ট্যাঙ্ক করার জায়গা ওরা দেখাতে পারছেন না বলে কাজে দেরি হচ্ছে।’’

অন্যান্য সরকারি সুবিধা না পাওয়া নিয়ে যৌনকর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, বিপিএল. কার্ড না থাকলে বার্ধক্য ভাতা বা ইন্দিরা আবাসন যোজনার টাকা পাওয়া যায় না। আর বড় রাস্তা পাকা করতে প্রচুর টাকা লাগবে। পঞ্চায়েতের তহবিলে সেই টাকা নেই।’’

Toilet Construction Complaint
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy