Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কাঠগড়ায় পর্যটন সংস্থা

আন্দামানে হয়রানি পর্যটকদের

পর্যটন সংস্থাকে দাবিমত পুরো টাকা মিটিয়ে দিয়েই আন্দামানে বেড়াতে গিয়েছিল ১০টি পরিবার। কিন্তু ওই সংস্থা সেখানে টাকা না পাঠানোয় হয়রানির শিকার হতে হয়েছে পরিবারগুলিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪১
Share: Save:

পর্যটন সংস্থাকে দাবিমত পুরো টাকা মিটিয়ে দিয়েই আন্দামানে বেড়াতে গিয়েছিল ১০টি পরিবার। কিন্তু ওই সংস্থা সেখানে টাকা না পাঠানোয় হয়রানির শিকার হতে হয়েছে পরিবারগুলিকে। ওই পর্যটকদের অভিযোগ, কোথাও না গিয়ে পাঁচ দিন হোটেলেই কাটাতে হয় তাঁদের। শেষে পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। হুগলির শেওড়াফুলির ওই পর্যটন সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পর্যটন সংস্থার কর্ণধার বিবেকানন্দ গুপ্ত অবশ্য তাঁদের গাফিলতির কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে পর্যটকদের কিছু অসুবিধা হয়েছিল। তবে আমরা সাধ্যমতো ওঁদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। দশ দিনের মধ্যে সাত দিন ওঁরা ঠিকঠাকই ঘুরেছেন। দু’টি জায়গায় কিছু সমস্যা হওয়ায় যেতে পারেননি। আমরা পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে চেষ্টার ত্রুটি রাখি না।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ১০টি পরিবার পুজোর পর আন্দামানে বেড়ানোর জন্য বিমানের টিকিন কাটে। সেখানে বেড়ানো ও হোটেলের জন্য ওই পর্যটন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে। ঠিক হয় পোর্টব্লেয়ারে নামা থেকে ফেরার দিন ওই বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত যাবতীয় দায়িত্ব নেবে ওই সংস্থা। মোট ২৪ জনের জন্য মাথাপিছু ১৪ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। যাওয়ার আগে পুরো টাকাই মিটিয়ে দেওয়া হয়। ১২ অক্টোবর পর্যটকদের দলটি পোর্টব্লেয়ারে পৌঁছয়। সেখান থেকে তাঁদের গাড়িতে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১২ থেকে ১৫ অক্টোবর তাঁরা ঘুরে বেড়ান। গোলমাল শুরু হয় ১৬ তারিখে লিটল আন্দামান থেকে ফেরার সময়। স্থানীয় এজেন্ট তাঁদের জানান, সরকারি জাহাজ নেই। অন্য জাহাজে ফিরতে গেলে মাথা পিছু ৫০০ টাকা লাগবে। বাধ্য হয়ে সকলে ওই টাকা দিয়ে দেন। তারপর ওই এজেন্ট জানান, শেওড়াফুলি থেকে ওই পর্যটন সংস্থা টাকা না পাঠানোয় তিনি হোটেল ভাড়া দিতে পারছেন না। তাই ওই টাকা তিনি রেখে দেবেন। জাহাজে ফিরতে আরও ৫ হাজার ৮০০ টাকা দাবি করেন ওই এজেন্ট। উপায়ান্তর না দেখে পর্যটকেরা ওই টাকাও দিয়ে দেন।

পর্যটক দলের এক সদস্য শুকদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সকলে নীল ও হ্যাভলক দ্বীপ ঘুরবেন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় এজেন্ট তাঁদের জানান, শেওড়াফুলির সংস্থাটি টাকা পাঠায়নি। তাই তাঁদের ঘোরানো সম্ভব নয়। অগত্যা ১৬ তারিখ থেকে হোটেলেই কাটাতে হয় সকলকে। ২০ অক্টোবর হোটেল থেকে বলা হয়, অনেক টাকার বিল বাকি। বিল মেটানো না হলে জিনিসপত্র আটকে রাখা হবে। দলের আর এক সদস্য তপন কুমার চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এরপর সকলেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। বেড়ানো ভুলে কী করে বাড়ি ফিরব, সেটাই একমাত্র চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়।’’ উপায় না দেখে তাঁরা নিজেদের আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা বিষয়টি শ্রীরামপুরের এসডিপিও সুবিমল পালকে জানান।

পুলি‌শের হস্তক্ষেপে ২১ অক্টোবর হোটেলের বিল মিটিয়ে দেয় পর্যটন সংস্থাটি। ২২ তারিখে আন্দামান থেকে ফিরে আসে পর্যটকদের দলটি। রবিবার শেওড়াফুলি ফাঁড়িতে অভিযোগ জানানো হয় পর্যটন সংস্থার বিরুদ্ধে। শেওড়াফুলির বাসিন্দা অলোক বসু বলেন, ‘‘ঘুরতে তো পারিইনি, উল্টে এতটা অসম্মানিত হতে হয়েছে বলার নয়। তবে পুলিশ খুবই সাহায্য করেছে।’’

হুগলি জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, অভিযোগ পাওয়া মাত্র ওই পর্যটন সংস্থার মালিককে ডেকে আন্দামানের হোটেলের বিল মিটিয়ে দিতে বলা হয়। টাকা পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান।’’

পর্যটকদের প্রতিক্রিয়া, ওই সংস্থার কথাতেই পুরো টাকা মিটিয়ে তাঁরা বেড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁদের যে হয়রানি ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তার জন্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Andaman Tourist Harrasment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE