Advertisement
০৩ মে ২০২৪
ঘোড়াবেড়িয়ায় খুন দুই তৃণমূল কর্মী

স্তব্ধ গোটা দ্বীপ, বন্ধ দোকানপাটওনুরুল আবসার

সকালে প্রকাশ্যে গুলি করে এবং কুপিয়ে খুন করা হয় ঘোড়াবেড়িয়ার দোকানিপাড়ার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী শেখ শাজাহান (৪৫) এবং তাঁর ভাই ওই দলেরই কর্মী শেখ লালচাঁদকে (৪৩)। এর পর জনা চল্লিশ দুষ্কৃতী বন্দুক উঁচিয়ে, তরোয়াল ঘোরাতে ঘোরাতে ঘটনাস্থল ছাড়ে।

নিহত: শেখ শাজাহান ও শেখ লালচাঁদ নিজস্ব চিত্র

নিহত: শেখ শাজাহান ও শেখ লালচাঁদ নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা!

মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ নদী দিয়ে ঘেরা হাওড়ার জয়পুরের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দুই পঞ্চায়েত জেলার ‘দ্বীপ এলাকা’ হিসেবে পরিচিত। শুক্রবার সকালে ঘোড়াবেড়িয়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় প্রায় ২২ কিলোমিটার সীমানা বিশিষ্ট এই দ্বীপের জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। দুপুরেও রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। প্রতি ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ। বন্ধ বাজার, দোকান, অফিস, স্কুল।

সকালে প্রকাশ্যে গুলি করে এবং কুপিয়ে খুন করা হয় ঘোড়াবেড়িয়ার দোকানিপাড়ার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী শেখ শাজাহান (৪৫) এবং তাঁর ভাই ওই দলেরই কর্মী শেখ লালচাঁদকে (৪৩)। এর পর জনা চল্লিশ দুষ্কৃতী বন্দুক উঁচিয়ে, তরোয়াল ঘোরাতে ঘোরাতে ঘটনাস্থল ছাড়ে। যাওয়ার আগে আতঙ্ক ছড়াতে তারা গুলি করে এক মহিলা এবং যুবককেও। অভিযোগ ওই দলে ছিল স্থানীয় বাসিন্দা বিলু মল্লিকও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর বালা মল্লিক এবং তার ভাই বিলু তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কর্মী হিসাবে উঠে আসে। তাদের সঙ্গেই ছিলেন শাজাহান এবং লালচাঁদ। শাজাহানদের সঙ্গে বিলুদের গোলমালের শুরু ২০১০ সালে। বালা-বিলু দুই ভাইকে গ্রামছাড়া করে। পরে তোলাবাজির অভিযোগে বালা-বিলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে ধরা হয় তোলাবাজিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ইমতিয়াজ মল্লিককেও। গ্রামে তদন্তকেন্দ্র তৈরি করে পুলিশ।

বালা, বিলু, ইমতিয়াজ ধরা পড়ার পরে গ্রামে ফেরেন শাজাহান এবং লালচাঁদ। গ্রামবাসীদের কয়েক জনের অভিযোগ, এই দুই ভাই বালা-বিলুর স্থানটি নেন। লালচাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে কুলিয়াঘাট জমা নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগারের অভিযোগ ওঠে। শাজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারির নামে পঞ্চায়েতের টাকা নয়ছয় করার।

বালা, বিলু এবং ইমতিয়াজরা জামিন পেলেও অন্য মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় চাইলেও গ্রামে ফিরতে পারছিল না। গ্রামবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন, ওই তিন জন যাতে গ্রামে ফিরতে না পারে সে জন্য বেনামে মামলাগুলি শাজাহান এবং লালচাঁদই করাচ্ছিলেন। গ্রামবাসীদের অনুমান, সেই রাগেই তারা খুন করার পরিকল্পনা করে শাজাহান এবং লালচাঁদকে। গ্রামবাসীদের দাবি, কাপড়ে মুখ ঢাকা থাকলেও বিলু এবং ইমতিয়াজের ছেলেকে চেনা গিয়েছিল। লড়াইটা তোলাবজাদের দু’টি গোষ্ঠীর বলেও অনুমান অনেকের।

শাজাহান খুন হওয়ার পরেও এলাকার কোনও তৃণমূল কর্মী বা নেতাকে তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। উল্টে এই খুনোখুনির পরিণতি নিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তোলাবাজির অভিযোগ মানেননি শাজাহান এবং লালচাঁদের পরিবার। গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি পুলক রায়ও এটিকে তাঁদের দলের কর্মীর উপরে দুষ্কৃতীদের হামলা বলেই বর্ণনা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE