Advertisement
E-Paper

পাখি তো আসে, আতিথেয়তার দায় কার!

২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। পরিত্যক্ত হিন্দমোটর কারখানার বিশাল এলাকা। তারই মধ্যে রয়েছে তেল পুকুর। গত পাঁচ বছরে সেখানে একে একে আসতে শুরু করেছে পাখির দল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৭
ঝাঁক: বলদবাঁধের জলায় পাখির দল। —নিজস্ব চিত্র।

ঝাঁক: বলদবাঁধের জলায় পাখির দল। —নিজস্ব চিত্র।

২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। পরিত্যক্ত হিন্দমোটর কারখানার বিশাল এলাকা। তারই মধ্যে রয়েছে তেল পুকুর। গত পাঁচ বছরে সেখানে একে একে আসতে শুরু করেছে পাখির দল। বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল, মাছরাঙারা সেই পুকুরেই পেতেছিল সংসার, খানিকটা নিশ্চিন্তে। কিন্তু বছর খানেক ধরে সে সংসারে ফের অশনি সংকেত। এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, কারখানা চত্বরে তৈরি হচ্ছে বহুতল। আর তার জেরে ফের উধাও হয়ে যেতে পারে পাখির ঝাঁক।

হিন্দমোটর কারখানা চত্বরে সব সময়ই গাছ ছিল প্রচুর। তাতে শামুকখোলের বাসা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর কমে গিয়েছে মানুষের যাতায়াত। কমেছে আওয়াজ। তারই ফলে পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। শুধু পাখি নয়, ওই চত্বরে নানা প্রজাতির সাপও থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কিন্তু সম্প্রতি ওই চত্বর সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে বহুতল নির্মাণ। উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী, হিন্দমোটর, কোতরং এলাকায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন শশাঙ্ক রায়।

তিনি বলেন, ‘‘ইদানীং গাড়ির আনাগোনা খুব বেড়েছে ওখানে। তার ফলে ধুলোও বেড়েছে। ওখানে সারা বছরই পাখি থাকে। এ বার আমরা তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।’’

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষ পুরসভা-সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে জানিয়েছেন। অভিযোগ, পাখি রক্ষায় তেমন সচেতন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এলাকার আর এক বাসিন্দা সৈকত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ওই অঞ্চলে প্রচুর পাখি দেখেছি। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তারা সংখ্যায় বেড়েছে। কিন্তু পাখির নিরাপদ আশ্রয় এবং নিরাপত্তা কিন্তু পাল্লা দিয়ে কমছে! আমাদের সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত।’’

উত্তরপাড়া পুর এলাকার মধ্যেই হিন্দমোটর। একটা সময়ে হিন্দমোটর কারখানা ও আবাসন এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন বর্তমান পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। তিনি বলেন, ‘‘আসলে ওই এলাকা হিন্দমোটর কারখানা কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন। তাই পুরসভার প্রায় কিছুই করার নেই। তবে আমি বনদফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’

শুধু হিন্দমোটর নয়। পাখির আনাগোনা নিয়ে চিন্তায় হুগলির অন্য শহরগুলিও। হরিপালের কৈকালা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলদবাঁধ— পাখির ঝাঁকের অন্যতম আশ্রয়। কয়েক দশক ধরেই এই তল্লাটে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা। শামুকখোল, বক, পানকৌড়ি আর মাছরাঙারা এখানে নিরাপদ। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, চোখরাঙানি অবশ্য কম ছিল না। শীত শুরু হলে যেমন পাখিরা আসে, তেমনই আসে পিকনিকের দল। ‘‘চড়া মাইকের আওয়াজে মানুষই টিঁকতে পারে না। পাখিরা থাকবে কী করে?’’ প্রশ্ন তোলেন এলাকার এক বৃদ্ধ।

কৈকলার বাসিন্দা স্বরূপ মিত্র, কার্তিক দাসেরা বলেন, ‘‘বড় বড় উনুনের ধোঁয়ায় বাতাস ভারী হয়ে যায়। জলাশয় ভরে যায় থার্মোকলের থালায়। পাখিরা থাকবে কোথায়?’’

মোট ৭টি ভেড়ি রয়েছে বদলবাঁধ এলাকায়। সেই সব ভেড়িতেই পাখি আসে। পরিস্থিতি অবশ্য ভাল হয়েছে বলে দাবি গাছগাছালিতে ঘেরা গ্রামের প্রবীণেরা। তাঁরা কিন্তু বলেন, ‘‘এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সচেতন। তাতে সুবিধা হয়েছে। এখানে পাখিদের পর্যাপ্ত খাবার থাকার ভিড় বেশি।’’

বলদবাঁধেরই বাসিন্দা বনশ্রী দাস বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি পাখিরা যাতে নিরাপদে থাকে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও বোঝানো হচ্ছে মানুষকে। এখানে পাখি শিকারের কোনও উপদ্রব নেই। উল্টে কেউ প্রকৃতিবিরুদ্ধ কিছু আচরণ করলে আমরাই রুখে দিই।’’

Wildlife Bird
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy