জলের দাবিতে ভদ্রেশ্বরে স্টেশন রোডে অবরোধ। ছবি: তাপস ঘোষ।
পুরসভার কাছে বার বার জানিয়েও সমস্যা সমাধানের কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি। অথচ ফি বছর গরম শুরু হতে না হতেই জল পেতে নাকানি চোবানি শুরু হয়ে যায় গোটা এলাকার মানুষের। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে জলের জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে নতুন পাম্প বসানো হয়েছিসয়। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবতর্ন না হওয়ায় এ বারও গরমে জল না পাওয়ার আশঙ্কায় সোমবার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হলেন ভদ্রেশ্বরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের খুড়িগাছি দক্ষিণপাড়ার মানুষ।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, এলাকায় জলের সমস্যা পুরনো। পানীয় জল প্রায় মেলে না বললেই চলে। পুরসভাকে সমস্যার কথা বহুবার জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। এ দিন এলাকার কয়েকশো মানুষ যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা, সকাল থেকে দু’দফায় ভদ্রেশ্বর স্টেশন রোড অবরোধ করেন। সকাল আটটা থেকে একঘণ্টা অবরোধ চলার পর সকাল ৯টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেওয়া হয় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে। ফের বেলা ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। অবরোধ চলাকালীনই স্থানীয় কাউন্সিলার তৃণমূলের স্মৃতিরেখা বসু জলের সমস্যা নিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক বুঝে এলাকা ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। এরপর আন্দোলনকারীরা তাঁর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।
নিজের ওয়ার্ডে জলের সমস্যা মেনে নিয়ে স্মৃতিরেখাদেবী বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সমস্যার সমাধানে পুরপ্রধান থেকে সকলের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি।” তিনি জানান, বছর খানেক আগে এখানে একটা নতুন পাম্প বসানো হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য তার পরেও জল সরবরাহ নিয়ে সমস্যা থেকে গিয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জল সরবরাহ স্বাভাবিক করতে।”
ভদ্রেশ্বর পুরসভার প্রধান দীপক চক্রবর্তী অবশ্য জলের সমস্যাকে গরমের স্বাভাবিক সমস্যা হিসাবে দেখতেই অভ্যস্ত। তাঁর কথায়, “গরম পড়লে জলের সমস্যা চিরদিনের। তার জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হয় না।’’ পুরসভায় জলের বিষয়টি যিনি দেখভাল করছেন সেই উপপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই অঞ্চলে জলের সমস্যা মেটাতে নতুন পাম্পও বসানো হয়। কিন্তু সেটি চালু হওয়ার পর কোনও কারণে ঠিকমত জল সরবরাহ হচ্ছে না। শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে যাতে সমাধানের উপায় বের করা যায় তার চেষ্টা চলছে। আপাতত পুরসভা থেকে চারটি জলের ট্যাঙ্ক ওই এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষীরানি শঙ্কর বলেন, “এলাকায় একটি মাত্র নলকূপ। ফলে বিরাট লাইন পড়ে। তার উপর জল এতই সরু যে এক বালতি জল পেতে দীর্ঘ সময় কেটে যায়। স্নানের জন্য কোনওরকমে একটু জল জোগাড় করতে পারলেও পানীয় জলের সমস্যা মারাত্মক আকার নিয়েছে। অনেকবার আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি। ফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছি।” বছর ষাটের গীতা দাস বলেন, ‘‘জন্ম থেকেই এই এলাকায় বাস। জলের সমস্যা আগেও ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও একটু জল পেতাম। এখন যা অবস্থা তাতে জলই নেই। যাতে জল পাই সে জন্যই সকলের সঙ্গে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy