উদয়নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে তাঁতহাটের অসমাপ্ত ভবন। ছবি: সুব্রত জানা।
দোকান নিতে ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়েছেন প্রায় দেড় বছর আগে। কিন্তু এখনও তৈরিই হয়নি তাঁতহাট।
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে এই হাট তৈরি করছে জেলা হস্তশিল্প দফতর। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কবে হাটের কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেন না জেলা হস্তশিল্প দফতরের কর্তারা। যদিও ওই দফতরের পক্ষ থেকে দায় চাপানো হয়েছে উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির ঘাড়ে। দফতরের এক কর্তার অভিযোগ, হাটের ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিকে। তারাই ঠিক সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে চালু করা যায়নি তাঁতহাট।
হাট তৈরতে টাকা দিচ্ছে রাজ্য ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। খরচ ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। উদয়নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে তিনতলা ওই ভবনে চারটি ব্লক তৈরি করার কথা। তার মধ্যে ৮২টি দোকান তৈরি হচ্ছে নীচের তলায়। ২০টি সংরক্ষিত রাখা হয়েছে তাঁতিদের জন্য। বাকিগুলি অন্য ব্যবসায়ীরা নিতে পারবেন। দোতলা এবং তিনতলায় তৈরি হচ্ছে হাট। সেখানে থাকবে স্টল। যার বেশিরভাগটাই তাঁতিদের জন্য। স্টল এবং দোকানঘর—দুটি ক্ষেত্রেই নির্মাণকাজ শুরুর আগে নকশা দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশিরভাগ বিলি করে দেওয়া হয়েছে। দোকানঘরের জন্য দুরকম দাম ধরা হয়েছে। তাঁতশিল্পী বা তন্তুবায় সমিতির জন্য দাম ৩ লক্ষ টাকা করে। অন্য দিকে তাঁতি নন এমন ব্যবসায়ীদের জন্য একেকটি দোকানের দাম ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা।
২০১৫ সালের অগস্ট মাসে দোকান বিলি করে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত সমিতি, বিধায়ক, রাজ্য হস্তশিল্প দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া হয় ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড মনিটারিং কমিটি। এই কমিটিই দোকান বিলি করে। ব্যবসায়ী এবং তাঁতি মিলিয়ে যাঁদের দোকান দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মোট দামের ৪০ শতাংশ টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, টাকা নেওয়ার সময়েই তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছিল দেড় বছরের মধ্যে দোকানঘর দেওয়া হবে।
উদয়নারায়ণপুরে গিয়ে দেখা গেল একটি মাত্র ব্লক তৈরি হয়েছে। তা-ও তা সম্পূর্ণ হয়নি। বাকি তিনটি ব্লকের নির্মাণই শুরু হয়নি। দোকানের জন্য ২ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন এমন এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এ যেন ঘোড়ার আগে চাবুক জুতে দেওয়া। দোকানই হল না। অথচ তার জন্য টাকা নিয়ে নেওয়া হল। তিনি বলেন, ‘‘কবে দোকান পাবো, সে বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতিকে প্রশ্ন করলে সদুত্তর মিলছে না।’’
কেন এই অবস্থা?
জেলা হস্তশিল্প দফতর সূত্রে খবর, পুরো ভবনটির নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিকে। প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য তাদের হাতে দেওয়া হয় ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল গত অক্টোবর মাসে। তা পারেনি তারা। এক কোটি ৩ লক্ষের মধ্যে খরচ হয়েছে ৯০ লক্ষ টাকা। পুরো টাকা খরচ করে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হলে তবেই পরবর্তী পর্যায়ের টাকা দেবে ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। উল্লেখ্য, সমস্যাটি নিয়ে উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে বলে জেলা হস্তশিল্প দফতর সূত্রে খবর।
কী বলছেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা?
কয়েক মাস আগে উদয়নারায়ণপুরে বন্যা হয়। রাস্তাঘাট ডুবে যায়। সেই কারণেই নির্মাণকাজে দেরি হয়েছে বলে জানালেন সমিতির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী আনা যায়নি। যে সব রাজমিস্ত্রি কাজে ছিলেন বন্যার সময় তাঁরাও কাজ ছেড়ে চলে যান।’’ একইসঙ্গে অবশ্য তাঁর আশ্বাস, টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
নামে তাঁতহাট হলেও দোকান বিলির ক্ষেত্রে তাঁতিদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড মনিটারিং কমিটির সভাপতি সনাতন মণ্ডল বলেন, ‘‘তাঁতিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া মেলেনি। তাই অন্য ব্যবসায়ীদের দোকান দিতে হয়েছে। কারণ সরকার শুধুমাত্র ভবনটি করে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ, নিকাশির ব্যবস্থা করতে হবে মনিটারিং কমিটিকে। দোকান বিলি না হলে তার খরচ আসবে কোথা থেকে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy