পুজো মিটেছে। কিন্তু তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটেনি। ফলে, হুগলিতে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত কবে থেকে পুরোদস্তুর উন্নয়নের কাজ শুরু করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। কারণ, এখনও বহু পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড পুরো গঠন হয়নি। জেলা পরিষদে শুধু সভাধিপতি এবং সহ-সভাধিপতি নির্বাচনই হয়েছে। বাকি পদের বিলিবণ্টন হয়নি।
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, পঞ্চায়েত ভোটের পরে বোর্ড গঠনের শুরু থেকে যে ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারবার সামনে এসেছে, তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভোটাভুটি এড়ানো যায়নি। কিন্তু তার পরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটেনি। অনেক পঞ্চায়েত সমিতিতে কর্মাধ্যক্ষ পদ নিয়ে দড়ি টানাটানি অব্যাহত। ফলে, সেখানে বোর্ড গড়া যাচ্ছে না। ধাক্কা খাচ্ছে উন্নয়নের কাজ।
এক জেলা পরিষদ সদস্যেরই ক্ষোভ, ‘‘এ বার ভোটে জেতার পর বেশ আনন্দ হয়েছিল। ভেবেছিলাম নতুন উদ্যেমে কাজ শুরু করতে পারব। কিন্তু হল কই? জেলা পরিষদ আর কবে গঠন হবে?’’ সিঙ্গুরের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘‘লোকসভা ভোট এগিয়ে আসছে। আমরা আর কতদিন কাজ করার সুযোগ পাব? দিন ঘোষণা হলেই তো নির্বাচনী-বিধি বলবৎ হয়ে যাবে। অনেক কাজ আটকে যাবে।’’
অনেক ঠিকাদারও এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। যে সব ঠিকাদার ইতিমধ্যে কাজ শেষ করেছেন, তাঁরা প্রাপ্য টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। ফলে, টেন্ডার প্রক্রিয়া থমকে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। ফুরফুরায় একটি সরকারি বাসস্ট্যান্ড তৈরিতে তিন বার ডেকেও ঠিকাদার মেলেনি। সেখানে একটি প্রকল্পের এক ঠিকাদারের আক্ষেপ, ‘‘পরিস্থিতি এখন এমনই যে এই উৎসবের মরসুমে ধার করে কর্মচারীদের টাকা মেটাতে হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেওয়ার জন্য সরকারি টাকা রয়েছে, তবু কোনও অজ্ঞাত কারণে তা দেওয়া হচ্ছে না।’’
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তবে তিনি মেনে নিয়েছেন জেলা পরিষদ এবং কিছু পঞ্চায়েত সমিতি গঠনে দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ঠিকই, এ বার কিছুটা বাড়তি সময় লাগছে। আসলে এত বড় জেলা! আমরা দ্রুত জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন করে এ বার কাজে ফিরতে চাইছি।’’ জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমানের দাবি, ‘‘পুজোর কারণে সব মিলিয়ে এ বার বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় গড়িয়ে গেল। তবে পুজো শেষ হয়ে গিয়েছে, আর দেরি হবে না। আশা করছি, শীঘ্রই যে সব জায়গায় বোর্ড গঠনের কাজ এখনও বাকী রয়েছে, তা শেষ হয়ে যাবে।’’
হুগলিতে মোট জেলা পরিষদে আসন ৫০টি। ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসনসংখ্যা ৬০৭টি। এখনও পর্যন্ত ২০৮টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিগুলির সভাপতি ও সহ-সভাপতি স্থির হয়ে গেলেও স্থায়ী সমিতি এবং দফতর বণ্টনের কাজ শেষ হয়নি। জেলা পরিষদের দু’টি ছাড়া সব পদ ফাঁকা। অথচ, পঞ্চায়েত স্তরে বহু প্রকল্পের অনুমোদন জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতি থেকে মেলে। ফলে, পঞ্চায়েতগুলিও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি। থমকে রয়েছে গ্রামোন্নয়ন।
২০১৭ সালের ১ জুন তারকেশ্বরে প্রশাসনিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ (টিডিএ) তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওই তহবিলে পাঁচ কোটি টাকাও দিয়েছিলেন। তারও আগে হুগলির আর এক ঐতিহাসিক স্থান, ফুরফুরায় একই ভাবে উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে দিয়েছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য এটাই— এলাকার সার্বিক উন্নয়ন।
কিন্তু সেই কাজও থমকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy