Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পুড়িয়ে মারার চেষ্টায় বাধা, হাত পুড়ল বধূর

দুর্বল শরীরে বিছানায় শুয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিক শুনে কোনওমতে উঠে বসলেন। সামনে হাত দুটি মেলে ধরলেন। দেখা গেল কনুই পর্যন্ত পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে দুটো হাত। সেদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘বাপের বাড়ি থেকে বার বার টাকা আনতে বলছিল স্বামী।

অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া আরিফার দুই হাত। ছবি: সুব্রত জানা।

অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া আরিফার দুই হাত। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

দুর্বল শরীরে বিছানায় শুয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিক শুনে কোনওমতে উঠে বসলেন। সামনে হাত দুটি মেলে ধরলেন। দেখা গেল কনুই পর্যন্ত পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে দুটো হাত। সেদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘বাপের বাড়ি থেকে বার বার টাকা আনতে বলছিল স্বামী। রাজি না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অ্যাসিড খাইয়ে মারতে চেয়েছিল। বাধা দিতে গিয়েই এমন অবস্থা।’’

গত ১১ নভেম্বর উলুবেড়িয়ার বাজারপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে ওই ঘটনায় আক্রান্ত বধূ আরিফা বেগমের বাড়ির লোকজন উলুবেড়িয়া থানায় ওইদিনই অভিযোগ করেন। আরিফাকে সেদিনই উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। পরে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আরিফার বাবার অভিযোগ, ঘটনার পরে দু’দিন কেটে গেলেও পুলিশ মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কাউকে ধরেনি। এ বিষয়ে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই সময় আরিফার চিকিৎসা জরুরি ছিল। ইতিমধ্যে জিডি করে রাখা হয়েছে। বধূর পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ পেলেই পুলিশ আইনাইনুগ ব্যবস্থা নেবে। প্রসঙ্গত, রবিবারই আরিফা হাসপাতাল থেকে বাপের বাড়িতে ফেরেন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ দিন রাতেই উলুবেড়িয়া থানায় শ্বশুরবাড়ির লোকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

কী ঘটেছিল আরিফার সঙ্গে?

পুলিশ সূত্রে খবর, আরিফার বাপের বাড়ি উলুবেড়িয়ার পালোড়া গ্রামে। বছর চারেক আগে উলুবেড়িয়া বাজারপাড়ার সেখ নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বাজারপাড়াতেই কাপড়ের দোকান আছে নজরুলের। মেয়ের বিয়েতে সাধ্যমতো নগদ টাকা ও গয়না দেওয়া হয়েছিল বলে আরিফার বাবা আলতাফ হোসেন মোল্লা জানান। কিন্তু তারপরেও বার বার নজরুল টাকার দাবি করতে থাকেন বলে আলতাফের অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘দিন দিন জামাইয়ের টাকার দাবি ক্রমশ বাড়ছিল। এর জন্য মেয়ের উপরে উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত জামাই ও শ্বশুরবাড়ির অন্যরা।’’

আলতাফের অভিযোগ, টাকা না দেওয়ায় মাস তিনেক আগে আরিফাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মেয়েকে ফেরাতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সালিশিসভা ডাকে। সেখানে ঠিক হয়, জামাইয়ের ব্যবসার জন্য এক লক্ষ টাকা দিতে হবে তাঁকে। তবেই আরিফাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হবে। মেয়ের কথা ভেবে তিনি জামাইকে নগদ এক লক্ষ টাকা দেন বলে আলতাফ জানান। শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান আরিফা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফের টাকার জন্য মেয়ের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে আলতাফের অভিযোগ।

মাসতিনেক আগের ওই সালিশি সভায় হাজির ছিলেন উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খানও। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আরিফার শ্বশুরবাড়ির লোকদের বুঝিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছিলাম।’’ তবে সালিশিতে পাত্রপক্ষকে এক লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি কিছু জানতেন না আব্বাস উদ্দিনের দাবি।

রবিবার বাপের বাড়িতে বসে আরিফা বলেন, ‘‘আমি ওদের বলে দিয়েছিলাম আর একটা পয়সাও বাবা দিতে পারবে না। সে কথা বলার পর থেকেই আমার উপরে ফের অত্যাচার শুরু হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘গত শুক্রবার, ১১ নভেম্বর সকালে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাসুর এবং দুই ননদ মিলে একটি বোতলে অ্যাসিড এনে আমাকে জোর করে খাওয়াতে যায়। বলে তোকে অ্যাসিড খাইয়েই মারব। আমি বাধা দিলে অ্যাসিডে আমার দুটো হাতই পুড়ে যায়। জ্ঞান‌ হারাই আমি। পরে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি।’’

শ্বশুরবাড়ির লোকের দাবি, অ্যাসিড ঢেলে আরিফাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ মিথ্যা। বিবাদের জেরে আরিফা নিজেই হাতে অ্যাসিড ঢেলে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia Dowry Burn
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE