Advertisement
E-Paper

ঝাঁপিয়ে চোর ধরলেন যুবতী

পুলিশ অনিন্দিতাকে পুরস্কার দেওয়ার কথা ভাবছে। পড়শিরা বলছেন, ‘ধন্যি মেয়ে’! অনিন্দিতার স্বামী সায়ন্তন অবাক, ‘‘ওর যে এত সাহস, বুঝতে পারিনি!’’

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৪
ভাই শুভব্রতের সঙ্গে অনিন্দিতা। নিজস্ব চিত্র

ভাই শুভব্রতের সঙ্গে অনিন্দিতা। নিজস্ব চিত্র

চমকে গিয়েছেন সকলে। বাড়ির লোকজন, পাড়া-পড়শি, পুলিশও।

সপরিবার বেড়িয়ে বাড়ি ফিরেই চোরের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক যুবক। আর তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আর এক চোরকে যে ঝাঁপিয়ে ধরে ফেলবেন তাঁর দিদি, ভাবতে পারছেন না কেউ। বড়দিনের রাতে সাহসিকতা দেখিয়েই হইচই ফেলে দিয়েছেন চুঁচুড়ার হালদার বাগান এলাকার বছর ছাব্বিশের অনিন্দিতা কুণ্ডু।

পুলিশ অনিন্দিতাকে পুরস্কার দেওয়ার কথা ভাবছে। পড়শিরা বলছেন, ‘ধন্যি মেয়ে’! অনিন্দিতার স্বামী সায়ন্তন অবাক, ‘‘ওর যে এত সাহস, বুঝতে পারিনি!’’ আর ধরা পড়ার পরে সহদেব শিকারি নামে ওই দুষ্কৃতীর বিড়বিড়, ‘‘ফালতু ধরা পড়ে গেলাম। মেয়েটার গায়ে কী জোর!’’

অনিন্দিতার শ্বশুরবাড়ি এন্টালিতে। চুঁচুড়ায় বাপের বাড়ি। ১৯ ডিসেম্বর বাবা-মা, ভাই এবং স্বামীর সঙ্গে অসম বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার কথা ছিল সোমবার রাত ৮টা নাগাদ। ট্রেন দেরিতে আসায় তাঁদের ফিরতে রাত আড়াইটে বেজে যায়।

অটো করে এসে বাড়ির সামনে যখন ব্যাগপত্তর নামাচ্ছেন, তখন অনিন্দিতার ভাই, বছর চব্বিশের শুভব্রত কর্মকার গেট খুলে ঢোকেন। কিন্তু সদর দরজার তালা এবং হুড়কো ভাঙা দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি দরজা ঠেলে ঢুকে দেখেন, ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই দুষ্কৃতী বেরিয়ে এসে তাঁর উপরে চড়াও হয়। এক জন ভারী স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে মাথায় মারতেই তিনি চিৎকার করে ওঠেন। করে রক্ত বেরোতে থাকে। ভাইয়ের চিৎকারে দৌড়ে আসেন অনিন্দিতা। ভাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় বসে পড়তে দেখে এক দুষ্কৃতীকে জাপটে ধরে ফেলেন ওই যুবতী। অন্য জন পালায়।

চেঁচামেচিতে পাড়া-পড়শিরা আসেন। শুভব্রতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ এসে তালডাঙার সত্যনারায়ণ পল্লির বাসিন্দা সহদেবকে গ্রেফতার করে। সহদেব দিনে টোটো চালাত। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই যুবতীকে পুরস্কার দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

ওই পরিবারের লোকজন জানান, প্রতিটি ঘরের তালা এবং আলমারি ভেঙেছে দুষ্কৃতীরা। কিছু কাঁসার বাসন, সোনার গয়না এবং দামি জামাকাপড় খোয়া গিয়েছে। সকলের ধারণা, দুষ্কৃতীরা আরও কয়েকজন ছিল। তারা চুরির জিনিস নিয়ে আগে চম্পট দেয়। দুই দুষ্কৃতী থেকে গিয়েছিল। ভাবতে পারেনি বাড়ির লোক অত রাতে ফিরবেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেখানে ভিড়। শুভব্রত বলেন, ‘‘দিদি যে ভাবে এক জনকে কব্জা করল, তা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছি না। যে চোরটা আমাকে মারল, দিদিকে ঢুকতে দেখেই সে পালায়।’’ অনিন্দিতার বাবা পরিমলবাবু বলেন, ‘‘ছোট থেকেই মেয়ে শান্তশিষ্ট। পড়াশোনা নিয়ে থাকত। ওর যে এত সাহস আর উপস্থিত বুদ্ধি, কে জানত?’’

অনিন্দিতা কিন্তু প্রশংসায় ভাসছেন না। তিনি এখনও আতঙ্কে, ‘‘ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে একটা চোরকে ধরেছি ঠিকই, কিন্তু যদি ওদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকত, কী হতো!’’

thief Caught
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy