Advertisement
E-Paper

তিন সন্তান-সহ চার শিশু খুনে দোষী সাব্যস্ত যুবক

নিজের তিন শিশুসন্তান ও শ্যালিকার ছেলেকে নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে একটুও হাত কাঁপেনি তার। শুধু তাই নয়, চার জনকে নদীতে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার পরে তারা যে সত্যিই ভেসে গিয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও বেশ কিছুক্ষণ দামোদরের ধারে বসেছিল সে। নিশ্চিত হওয়ার পরে ওই রাতেই সে পালায় ভিনরাজ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৫
আদালতের পথে হাদি কুরেশি। ছবি: সুব্রত জানা।

আদালতের পথে হাদি কুরেশি। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজের তিন শিশুসন্তান ও শ্যালিকার ছেলেকে নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে একটুও হাত কাঁপেনি তার। শুধু তাই নয়, চার জনকে নদীতে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার পরে তারা যে সত্যিই ভেসে গিয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও বেশ কিছুক্ষণ দামোদরের ধারে বসেছিল সে। নিশ্চিত হওয়ার পরে ওই রাতেই সে পালায় ভিনরাজ্যে। পরে সংবাদ মাধ্যমে ওই ঘটনা দেখে সে ভাইকে ফোন করে জানতে চেয়েছিল ছেলেমেয়েদের ঠিকমত সৎকার হয়েছে কি না। কিন্তু পালালেও শেষ রক্ষা হয়নি। সাতদিন পরে ঘটনাস্থল থেেকই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় হাদি কুরেশি। চার বছর মামলা চলার পর সোমবার উলুবেড়িয়া এসিজেএম আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হাদির ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

এ দিন মামলার সরকারি আইনজীবী হারু দোয়ারি এবং অভিযোগকারীদের পক্ষে আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, ‘‘বাবা হয়ে নিজের সন্তানদের সন্দেহের বশে যে ভাবে খুন করা হয়েছে তা বিরল ঘটনা।’’

ঘটনাটি ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বরের। হাওড়ার টিকিয়াপা়ড়ার মুন্সী লেন-এর বাসিন্দা হাদি একটা কসাইখানায় কাজ করত। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ঘটনার দিন দুপুরে সে দুই মেয়ে আনিসা খাতুন (২) ও রৌনক খাতুন (৪), ছেলে শাহিদ হোসেন কুরেশি (৬) এবং শ্যালিকার আট বছরের ছেলে আব্দুল কাদিরকে নিয়ে পাশেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেরোয়। কিন্তু সেখানে খাওয়া-দাওয়ার পর হাদি বাড়ি না ফিরে চারজনকে নিয়ে চলে আসে টিকিয়াপাড়া স্টেশনে। সেখান থেকে হাওড়া-খড়্গপুর শাখার ট্রেন ধরে সে বিকেল নাগাদ কুলগাছিয়ায় স্টেশনে আসে। স্টেশন থেকে ভ্যানরিকশা ধরে পৌঁছয় মহিষরেখায় দামোদর নদের ধারে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ক্রমে অন্ধকার ও এলাকা নির্জন হয়ে গেলে সেই সুযোগে সে এক এক করে নিজের তিন সন্তান ও শ্যালিকার ছেলেকে দামোদরে ছুড়ে ফেলে দেয়। জলের স্রোতে ভেসে যায় তারা। তার পরেও বেশ কিছুক্ষণ সেখানে থেকে সে পরে ট্রেন ধরে উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ে পালায়। ছেলেমেয়ে ও হাদির খোঁজে কুরেশি পরিবার পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দামোদর থেকে চারজনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেহ উদ্ধারের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর পরিবারের লোকজন বাগনান থানায় যোগাযোগ করে দেহগুলি শনাক্ত করেন।

সংবাদ মাধ্যমে সব খবর জানতে পেরে হাদি প্রতাপগড় থেকেই তার ভাইকে মোবাইলে ফোন করে জানতে চায় দেহগুলি সৎকার হয়েছে কি না। বাড়ির লোকের কাছ থেকে এ কথা জানতে পেরেই পুলিশের সন্দেহ হয়, হাদিই এই চারজনের খুনের ঘটনায় জড়িত। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রতাপগড়ে হানা দেয়। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

মামলাটির গুরুত্ব বুঝে তদন্তের ভার দেওয়া হয় রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশকে। দফতরের এক কর্তা জানান, অপরাধ বিজ্ঞান বলে, অপরাধীরা একবার হলেও অপরাধের স্থলে যায়। সেই অনুমান করে পুলিশ দামোদরের দু’পাশের এলাকায় নজরদারি শুরু করে। সেখানেই ২১ নভেম্বর সকালে কুরেশিকে ঘুরতে দেখে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে জানা যায় কুরেশির সন্দেহ ছিল ওই তিন সন্তান তার ঔরসজাত নয়। এই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়াও হতো। সেই রাগেই নিজের তিন সন্তানকে সে খুনের পরিকল্পনা করে। কিন্তু, শ্যালিকার ছেলেকে সে মারল কেন?

এ বিষয়ে গোয়েন্দা দফতরের একজনের বক্তব্য, চারজনকে একসঙ্গেই হাদি বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। নিজের তিন ছেলেমেয়েকে জলে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার পরে সে এই ঘটনার সাক্ষী রাখতে চায়নি। আর তাই শ্যালিকার ছেলেকেও সে একই কায়দায় খুন করে।

মামলার সরকারি আইনজীবী হারু দোয়ারি এবং অভিযোগকারীদের পক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, ‘‘বাবা হয়ে নিজের সন্তানদের সন্দেহের বশে যে ভাবে খুন করা হয়েছে তা বিরল ঘটনা।’’

Hadi Qureshi Uluberia Murder Found Guilty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy