Advertisement
০২ মে ২০২৪

অযথা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই অনীহা ‘শ্রী’-তে, কৃষি দফতর

ধানের উৎপাদন বাড়াতে নিবিড় ধান চাষ ব্যবস্থা ‘শ্রী’ পদ্ধতি গত ছ’বছরেও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল না আরামবাগ মহকুমায়। প্রথম দিকে কৃষি দফতর থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করে এই পদ্ধতির চাষ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার শুরু হয়েছিল প্রথম দিকে। কিন্তু চাষিরা সে ভাবে উৎসাহ না দেখানোয় মহকুমার এই পদ্ধতির প্রয়োগে ভাটা পড়েছে। যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় পদ্ধতিটি চালু করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছিল, তার অধিকাংশ জায়গাতেই সাড়া মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪১
Share: Save:

ধানের উৎপাদন বাড়াতে নিবিড় ধান চাষ ব্যবস্থা ‘শ্রী’ পদ্ধতি গত ছ’বছরেও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল না আরামবাগ মহকুমায়। প্রথম দিকে কৃষি দফতর থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করে এই পদ্ধতির চাষ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার শুরু হয়েছিল প্রথম দিকে। কিন্তু চাষিরা সে ভাবে উৎসাহ না দেখানোয় মহকুমার এই পদ্ধতির প্রয়োগে ভাটা পড়েছে। যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় পদ্ধতিটি চালু করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছিল, তার অধিকাংশ জায়গাতেই সাড়া মেলেনি।

নতুন এই প্রযুক্তি নিয়ে কেন সাড়া মিলছে না চাষিদের?

কৃষি দফতরের দাবি, ধান চাষে নতুন প্রযুক্তিতে অযথা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই সাবেক পদ্ধতি থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না চাষিরা। যদিও কৃষি দফতরের এমন যুক্তি মানতে নারাজ প্রগতিশীল চাষিরা। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, কৃষি দফতরের সঙ্গে চাষিদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই বলেই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সুফল মিলছে না। কারণ, মাঠে এবং চাষিদের কাছে যাচ্ছেন না কৃষি দফতরের কর্মীরা। মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “মহকুমায় শ্রী পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কি বাধা রয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। তবে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন অভিযোগ ঠিক নয়।”

মহকুমা কৃষি আধিকারিকের কথায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে যে সব প্রতিবন্ধকতার আঁচ মিলেছে, তা হল এক, নতুন পদ্ধতিতে বীজ রোপণের সময় সাবেক পদ্ধতির চেয়ে তুলনায় বেশি শ্রমিক লাগা। দুই, সাবেক পদ্ধতিতে যেখানে বিঘা পিছু ৫ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে শ্রী পদ্ধতিতে ৮ জন শ্রমিক দরকার। তিন, নতুন পদ্ধতিতে চাষ অনেকটাই জৈব পদার্থ নির্ভর। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস থাকায় চাষিরা রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবণতা থেকে বেরোতে পারছেন না। চার, জমিতে সব সময় জল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। চিরাচরিত প্রথামত ধান গাছের গলা অব্দি জল রাখা যাবে না।

যদিও মহকুমা আধিকারিকের খেদ, শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের সুফলের তুলনায় তার অন্তরায়গুলোকেই চাষিরা বেশি করে গুরুত্ব দিচ্ছেন। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, শ্রী পদ্ধতিতে খুব কম জলে এবং কম সময়়ে চাষ করা সম্ভব। জমিতে জল জমিয়ে রাখার প্রয়োজনই নেই, খালি আদ্র রাখা হয়। ফলে বোরো চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর জলের সাশ্রয় হয়। বীজতলা থেকে ৩০ দিনের বদলে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনের মাথায় ধানের চারা তুলে জমিতে রোপণ করা যায। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে বীজতলা তৈরিতে যেখানে বিঘা প্রতি ৭-৮ কেজি বীজের প্রয়োজন, সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বীজ লাগবে মাত্র ১ কেজি। ফলনও ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি হবে। সাবেক পদ্ধতির চাষে যেখানে বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ থাকে, সেখানে শ্রী পদ্ধতিতে বিঘা পিছু লাভের অঙ্ক ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। বোরো চাষের ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জল লাগে অনেক কম। ফলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। সর্বোপরি কম খরচে উৎপাদন বেশি হয়। ফলে ছোট ও প্রান্তিক চাষির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী।

মহকুমার শ্রী পদ্ধতিতে চাষ করেছেন এমন চাষীদের কেমন অভিজ্ঞতা?

খানাকুলের বালিপুরের শচিন মেটে বলেন, “জৈব সারের জন্য খরচ একটু বেশি হয়। ৫ বিঘা জমির মধ্যে ২ বিঘায় শ্রী পদ্ধতিতে চাষ করে আসছি গত দু’বছর ধরে। বিঘা পিছু ধান পেয়েছি ২৪ মণ। আগে ১৪ থেকে ১৬ মণ পেতাম। সাধারণ ভাবে এমনিতে ধানের গোছে ১৬ থেকে ২০টা কাঠি থাকে, শ্রী পদ্ধতিতে চাষ করে এক একটা গোছে ৭২টা করে পাশকাঠি পেয়েছি। তা ছাড়া রোগপোকার উপদ্রব কম হওয়ায় পুষ্ট দানার সংখ্যা বেশি হয়।” একই অভিজ্ঞতা ঘোষপুরের শ্যামসুন্দর মান্না, গোবিন্দপুরের হারাধন বসুুর।

কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি এবং লাভের পরেও চাষিরা কেন শ্রী পদ্ধতিতে উৎসাহী হচ্ছেন না? গোঘাটের ভাদুর গ্রামের সুকুমার বাগ বলেন, “বাড়ির লোকজন মিলে শ্রমিকের কাজটা না করলে চারা তুলে এক একটা করে রোপণ করা সবার কাজ নয়। শ্রমিক লাগিয়ে কাজ করানোর ঝক্কি রয়েছে। তা ছাড়া রোপণের আগে জমি তৈরি করা, বীজ শোধন করা, বীজ বপনের পর নিয়মিত জমিতে জল নিয়ন্ত্রণের তদারকি সকলের পক্ষে সম্ভব নয়।” ঘোষপুরের শ্যামসুন্দর মান্নার কথায়, “আমাদের জমিতে ফলন দেখে অনেকে নতুন পদ্ধতি নিয়ে জানতেও চান। আশা করি, ধীরে ধীরে এই নয়া পদ্ধতি জনপ্রিয় হবে।”

তবে, নতুন পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ না করে কেউ কেউ চেষ্টা করছেন এর সঙ্গে সাবেক পদ্ধতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে ফলন বাড়ানোর। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ছ’টি ব্লকে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৯০ হেক্টর। তার মধ্য বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে শ্রী পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal arambag agriculture department paddy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE